আগে রাজাকার ভালো ছিল এখন খারাপ? বি. চৌধুরীকে অলি

বিকল্পধারার চেয়ারম্যান একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপর মহাসচিব থাকাকালে রাজাকারদের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। তবে এখন কেন তিনি বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে জামায়াত নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন- এই প্রশ্ন তুলে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে এক হাত নিলেন ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপি সভাপতি অলি আহমেদ।

জামায়াতে ইসলামী সঙ্গে থাকলে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য নয়- বি. চৌধুরীর এমন অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তার সমালোচনায় মাতেন অলি। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এলডিপির দলীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।

বি চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট আর কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের সঙ্গে ঐক্যের জন্য মরিয়া বিএনপি, যাকে তারা বলছে ‘জাতীয় ঐক্য’। তবে অলি আহমেদ এই ঐক্যের পক্ষে নন। নানা সময় তিনি ও তার দলের নেতারা সরাসরিই অবস্থান জানিয়ে এসেছেন।

এলডিপি সভাপতি বলেন, ‘বি. চৌধুরী যখন বিএনপির মহাসিচব ছিলেন তখন মসুলিম লীগের শাহ আজিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জয়পুরহাটের আব্দুল আলীম (মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত) ছিলেন রেলমন্ত্রী। এ ধরনের আরও অনেকেই বিএনপিতে ছিল।’

‘বি. চৌধুরী যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন তখন মুজাহিদ (জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ) এবং নিজামী (জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, মুজাহিদের পাশাপাশি যার ফাঁসি হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়) মন্ত্রিসভার সদস্য ছিল। তাহলে সময়ের প্রেক্ষিতে বক্তব্যের পার্থক্য হচ্ছে কেন?’

‘মাংস হালাল আর ঝোল হারাম এটা কেন’- বি. চৌধুরীকে এই প্রশ্ন রেখে অলি বলেন, ‘মহাসচিব থাকা অবস্থায় সব রাজাকাররা ভালো ছিল আর এখন তারাই রাজাকার, দেশদ্রোহী!’।

বি. চৌধুরী ও কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্য চেষ্টায় থাকা বিএনপিকেও একহাত নেন অলি। বলেন, ‘বলি জনগণের কাছে যাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, দোকানদারের কাছে যারা পরাজিত, তাদেরকে মাহাথির মোহাম্মদ বানান কেন?’

‘৯০ বছরের বুড়োকে ৮০ বছর বানানো যাবে কিন্তু ৫০ বছর বানানো যাবে না। মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার জন্মদাতা, আধুনিক মালয়েশিয়ার নির্মাতা। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নেই।’

বি. চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরীর প্রতি ইঙ্গিত করে অলি বলেন, ‘‘আমরা তো ছেলের কাছে বিক্রি হয়ে যাই। যারা আজকে ঐক্যজোটে আছে তাদের অনেকের ছেলে ভিওআইপি ব্যবসা করে।’

‘ভিওআইপি ব্যবসা কার থেকে নিয়েছে? আওয়ামী লীগের থেকে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে? আর এদিকে বলছে ঐক্য করতেছি। রুমের ভেতরে থাকলে একরকম আর বাইরে অন্য রকম।’

বিএনপিকে ২০ দলের শরিকদের বিষয়ে আরও মনযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অলি বলেন, ‘জোটে আমাদের অবস্থান বিএনপি স্পষ্ট করতে পারেনি। এটা স্পষ্ট করা উচিত।’

ড. কামালের পক্ষ থেকে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মঈনুল হোসেন তার কাছে বিশেষ প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন বলেও জানান অলি। বলেন, “তিনি বলেছেন, ‘আপনি যদি আসেন এ মুভমেন্টে গতি সঞ্চারিত হবে’। উত্তরে বলেছি, ‘আমি দুর্নীতিবাজ নই। আমি পরিষ্কার কথা বলি, আমি গেলে গতি সঞ্চারিত হবে তা জানি। তবে আমি ওখানে কাউকে নেতা বানানোর জন্য যাব না। আমি যাব দেশের গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে। সেটাতে যদি আসেন তাহলে কথা বলেন’।”

বিএনপিকে নিজের শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে দলটির সাবেক নেতা বলেন, ‘বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। তারা যদি এ স্বল্প সময়ের মধ্যে সংস্কার করে পুনর্গঠন করে এখনও তাদের পক্ষে যে কোনো কাজ করা সম্ভব।’

এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদৎ হোসেন সেলিমসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।