আদি হতে এ পর্যন্ত সুবর্ন অদ্বিতীয়

রুবাইত হাসান : শিরোনাম দেখে চমকে গেছেন? না কি হাসছেন? আর যাই হোক মনযোগী হউন। আমি আপনাকে অবাক আর বোবা বানিয়ে দিতে চলেছি। ঠিক আমি যেমন তাকে প্রথম জেনে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছিলাম। প্রশ্ন একটাই ছিল আমার, How is possible that? উত্তর অদৃশ্য! ঘটনা দৃশ্যমান। সেগুলোই শেয়ার করবো আজ আপনাদের সাথে। এতক্ষন যার সম্পর্কে বলছিলাম সে সুবর্ন। আপনার বাড়ির পাশের বউ-বর খেলাপাতি বা অমুকের নাতি মোবাইলে গেম খেলা সুবর্ন এ সে সুবর্ন নয়।আমি অন্য কারো কথা বলছি। বাবা-মা দু’জনই বাংলাদেশি, বর্তমানে বসবাস করছেন আমেরিকায়।

এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া কনিষ্ঠ শিশুটির প্রতিভায় মুগ্ধ গোটা ইউরোপ। স্কুলে যাওয়ার আগেই যে কি-না রসায়ন, ইংরেজি আর অঙ্ক শাস্ত্রে বেশ পটু। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, যে বয়সে খেলনা নিয়ে খেলার সময় সেই বয়সেই নানা গাণিতিক সমাধান দিচ্ছে এই বিস্ময়কর বালক। মাত্র ২ বছর বয়সে বালকটির রসায়নের ‘পিরিয়ডিক টেবিল’ মানে ‘পর্যায় সারণী’ মুখস্ত। আর এখন বয়স সবেমাত্র ছয়ে।

পুরো নাম সুবর্ণ আইজ্যাক বারি। জন্ম ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল। এই বয়সেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই অঙ্ক শাস্ত্র, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় সমানভাবে পারদর্শী, দিচ্ছে এসব বিষয়ে সমাধানও। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা ছাড়াই অনর্গল ইংরেজি বই পড়ছে, এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশ হইচই চলছে।

২ বছর বয়স চলাকালীন সময় একদিন তার বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ১ ১=?, ১-১=?, ১*১=?, ১/১=?। খুব দ্রুতই উত্তর দিয়ে দিলো সুবর্ণ। বাবা আবার জিজ্ঞেস করলেন, এন প্লাস এন সমান কত? সাথে সাথেই উত্তর দিলো টু এন, আর এন মাইনাস এন সমান কত? মাইনাস টু এন। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর সহজ বলে সাথে সাথে উত্তর দিয়ে দিলো সে, বাবা রীতিমতো বিস্মিত হলেন।

বিজ্ঞানী নিউটনের সাথে নামের মিল থাকলেও কাজের ক্ষেত্রে বেশ মিল পাওয়া যায় আইনস্টাইনের সাথে। অবশ্য আইনস্টাইন তো জন্মের পর থেকে ৪ বছর পর্যন্ত কথাই বলেননি, আর সুবর্ণ এই বয়সেই মুগ্ধ করছে সবাইকে।সেজন্যই আমি বলেছি নিউটন বা আইনস্টাইনও এই সময় আর যা করেছেন অন্তত এতদূর আসেননি, তাই তার তুলনাটাও কিন্তু সমান্তরাল ভাবে তাদের সাথে যায় না। তাই আমি সুবর্নকে কেবল সুবর্ন হিসাবেই দেখার পক্ষে।যদিও পেয়ে গেছে সে ক্ষুদে আইনস্টাইন খেতাব। যে কারণেই হয়তো বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন দ্য সিটি কলেজ অব নিউইয়র্কের প্রেসিডেন্ট লিসা কইকো। তিনি নিজেও একবার শিশু সুবর্ণের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। কাগজে, গ্লাসে কিংবা বোর্ডে বিভিন্ন জায়গায় গাণিতিক সমাধান করছে বছরের এই বিস্মিত বালক। আর সন্তানের এমন অবাক করা বিষয়গুলো দেখে বেশ আশাবাদী বাবা-মা।

মাত্র ২ বছরেই ভয়েস অফ আমেরিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছে। সাবরিনা চৌধুরী ডোনা তার সাক্ষাৎকার নেন এবং যেটি ছিল এ যাবতকালে ভয়েস অফ আমেরিকায় সবচেয়ে কনিষ্ঠ জনের সাক্ষাৎকার। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি অনলাইন টেলিভিশন ‘টাইম টেলিভিশন’-এ প্রচারিত হয় তার একটি সাক্ষাৎকার। নিউইয়র্কের মেডগার এভারস কলেজের (Medgar evers college) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জেরল্ড পোসম্যান ছোট্ট এ শিশুটির রসায়নের পর্যায় সারণীর ওপর দখল দেখে বেশ মুগ্ধ হন। নিজেই কিছু রাসায়নিক সঙ্কেত জিজ্ঞেস করেন, আর সুবর্ণ সেগুলোর খুব দ্রুত উত্তর দেওয়ায় অবাক হন তিনি।

সুবর্ণর একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখান থেকে উত্তর পাওয়া যায় বিজ্ঞানের প্রতি তার আকাঙ্ক্ষা দিন দিন কি পরিমাণ বাড়ছে। সাড়ে তিন বছর বয়স থেকেই বাবার ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ শুরু করে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে লেবুর সাহায্যে ব্যাটারি তৈরি। যার মাধ্যমে ইলেক্ট্রিক সার্কিট বানিয়ে পোটেনশিয়াল ডিফারেন্সের মাধ্যমে বাতি জ্বালানো যায়। মাত্র তিন বছর বয়সে অর্থাৎ ২০১৫ সালে এটি আবিষ্কার করে সে। শুধুমাত্র ৪টি লেবু, ৪টি পেরেক, ৪টি মুদ্রা ও ৫টি এলিগেটর কিপ ব্যবহার করেই বানানো হয় এ ব্যাটারি। লিমন কলেজের ফিজিক্সের চেয়ারম্যান ড. ড্যানিয়েল কাবাট সুবর্ণর বানানো এই ব্যাটারি দেখে মুগ্ধ হন। আর সুবর্ণ দেখছে মাত্র ১০ বছর বয়সেই হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন। আর এ জন্যই উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যে SAT পরীক্ষা দিতে হয় সেই প্রস্তুতি নেওয়ার অপেক্ষায় আছে সুবর্ণ। (চলবে….)