আবার একদলীয় ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা

বাংলাদেশ ২০১৪ সালের পর থেকে আবার একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ফিরে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডক্টর রওনক জাহান।

এক গবেষণা পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা নেই। কাগুজে বিশাল কাঠামো থাকলেও সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতির বিস্তার ঘটছে। দুদলের মধ্যে সংঘাতের চেয়ে আন্ত:কোন্দল বেশি।

শনিবার জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন আয়োজিত “বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল: নির্বাচন, আন্দোলন ও গণতন্ত্র” বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রওনক জাহান।

সেখানে তিনি বলেন, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে জোটভিত্তিক নির্বাচনী রাজনীতির কারণে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির সম্ভাবনা থমকে যাচ্ছে। এ কারণে জামায়াতসহ ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো পুনর্বাসিত হয়েছে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসনামলে বিএনপি-জাতীয় পার্টির মত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দল তৈরি হয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’দলই ৩১ শতাংশ ভোট পায়। বিএনপি ১৪০ টি আসনে জয় পায় এবং আওয়ামী লীগ পায় ৮৮টি। বিএনপি সরকার গঠনের জন্য জামায়াতের সহায়তা নেয়। ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দেশে একদল-প্রধান ব্যবস্থা থেকে একদলীয় পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। ২০১৪ সালের পর আবার সেই ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া চলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে দেয়া বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন: জোটভিত্তিক রাজনীতির উত্থান ঘটেছে ফাস্ট পাস্ট দ্য পোস্ট (এফপিটিপি) পদ্ধতির মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি নির্বাচনী আসনে একাধিক প্রার্থী অংশগ্রহণ করলেও যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান তিনি নির্বাচিত হন। এই এফপিটিপি পদ্ধতিতে দু’দলের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান তৈরি করে। উদাহরণ হিসেবে ১৯৯১ সালের বিএনপির জয়ের কথা তুলে ধরেন তিনি।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে ড. রওনক বলেন: বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর দলীয় রাজনীতিতে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের (১৯৭২-১৯৭৫) সময় দেশ একদল-প্রধান ব্যবস্থা থেকে একদলীয় পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তী পনের বছরের সামরিক আমলে (১৯৭৫-১৯৯০) আমরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপি,জাতীয় পার্টির মত দল জন্মেছে। ১৯৯১ সালে গণতন্ত্রে উত্তরণের পরের দশক দ্বিদলীয় ব্যবস্থা এবং পরবর্তীতে নির্বাচনী জোটনির্ভর দলীয় পদ্ধতি এসেছে।

অতীত ও বর্তমান রাজনীতির তুলনামূলক বিশ্লেষণে তিনি বলেন: আগে রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনসম্পৃক্ত হতো। ১৯৯১ সালের পর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে দল সংগঠনের চেয়ে অর্থ ও পেশি শক্তি ব্যবহার করে নির্বাচনে জয়ের মিশনে বেশি মত্ত হয়ে ওঠে।

ড. রওনক রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র, দুর্বৃত্তায়নের মত বিষয়গুলো তুলে ধরেন। উদাহরণ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ পরিস্থিতির উদাহরণ টানেন তিনি।

বিজয়ীদের সব প্রাপ্তির সুযোগে ভারসাম্য আনা না গেলে নির্বাচন কেন্দ্রিক সংঘাতে অচলাবস্থার উত্তরণ ঘটবে না বলে মনে করেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।

প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড. আহরার আহমদ। উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু, দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম প্রমুখ।