আমাদের নিজেদের মধ্যেই শত্রু আছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

আওয়ামী লীগে নিজেদের শত্রু আছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, এখনকার শত্রুদের চেনা যায় না। ৭ মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভা সফল করতে মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত দলের ঢাকা মহানগর শাখার বর্ধিত সভায় তিনি একথা বলেন।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আমাদের সামনে অনেকগুলো চক্রান্ত অপেক্ষা করছে। ৭১ সালের শত্রুকে চেনা যেত। এখনকার শত্রুদের চেনা যায় না। অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বসেছিলেন একটা অনুষ্ঠানে। তাকে পেছন থেকে মেরে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন আমার পেছনে যারা দাঁড়িয়ে তারা আমার কর্মী। কিন্তু পেছন দিয়ে মেরে দিলে কী করবেন, বলেন! আমাদের নিজেদের মধ্যেই শত্রু আছে। ৭১ সালের শত্রু তো এখানেও থাকতে পারে। এই শত্রু এখন সক্রিয় হয়ে গেছে।

খালেদা কারাবরণ আ’লীগের জন্য সুখকর কিছু নয়

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, ‘বেগম জিয়াকে আমরা জেলে পাঠাইনি। তিনি একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়স্ক মহিলা, তাকে কারাগারে পাঠানো আমাদের জন্য স্বস্তির বা সুখকর কিছু নয়। কেউ জেলে থাকুক আমরা চাই না।’

তিনি বলেন, ‘জেলে থাকার অভিজ্ঞতা তো অনেকের চেয়ে আমার বেশি আছে। সেখানে কত কষ্ট হয় আমি জানি। আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি জেলে গেছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় উনি বের হয়ে আসবেন।’

বিএনপির উদ্দেশে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আপনাদের আইনজীবীরা যদি দক্ষ হয় অবশ্যই উনি (খালেদা জিয়া) জেল থেকে বেরিয়ে আসবেন। আর যদি দক্ষ না হয়ে বলে- খালেদা জিয়া জেলে থাকলে প্রতিদিন ১০ লাখ ভোট বাড়ে। তার মানে উনি (মওদুদ) নিজেই চান তার নেত্রী জেলে থাকুক। আর প্রতিদিন ভোট বাড়ুক।’

তিনি বলেন, ‘এই আইনজীবী দিয়ে আপনি (খালেদা জিয়া) কিভাবে বের হবেন? এজন্য আমি বলেছি- এসব আইনজীবী বাদ দিয়ে অন্য আইনজীবী নেন। তাহলে তিনি বের হতে পারবেন।’

শহর নিয়ে আমরা বিব্রত

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে জনপ্রিয়তা কমে-বাড়ে। দল ক্ষমতায় থাকলে অনেক ভুলত্রুটি হয়। গ্রামের মানুষ আনন্দে-স্বাচ্ছন্দ্যে আছে। বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে, রাস্তা-ঘাটের উন্নতি হয়েছে। তারা সন্তুষ্ট। কিন্তু শহরের লোকদের সন্তুষ্ট করা কঠিন। শহরের লোক নিয়ে আমরা বিব্রত আছি।

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে বলব- শহরকে ঠিক করতে হবে। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভুলত্রুটি মাপ চেয়ে সব ঠিক করতে হবে। ঢাকা যা বলে সারা বাংলাদেশ তা করে।

জনসভায় বড় হলে শত্রুর হৃদকম্পন বাড়ে

৭ মার্চের জনসভায় নিয়ে আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুও তার জীবনে এর চেয়ে বড় জনসভায় বক্তব্য দিতে পারেননি। সেই দিনের এই জনসভায় কোনো সাধারণ জনসভা নয়, বিশেষ জনসভা। এটি উল্লাস করার জনসভা। অশুভ শক্তি বিরুদ্ধে লড়াই করার শপথ নেয়ার জনসভা।

তিনি বলেন, নিজের মনের টানে আসবেন, সবাইকে নিয়ে আসবেন। এখানে আপনারা পরিবার নিয়ে আসবেন। জনসভা বড় হলে শত্রুর হৃদকম্পন বাড়বে।

সবাইকে নিয়েই নির্বাচন হবে

বেগম জিয়া ও বিএনপিকে বাদ নির্বাচন করতে চায় সরকার- মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দোষ তো আমাদের নয়। শেখ হাসিনা আপনাদের আহ্বান করেছেন, সাড়া দেননি। নির্বাচন ভণ্ডলের জন্য জ্বালাও-পোড়াও করেছেন আপনারা।

তিনি বলেন, ফাঁকা মাঠে কে গোল দিতে চায় না, বলেন! ফাঁকা মাঠ দিলে আমরা কী করব বলেন! যথাসময়ে সবাইকে নিয়েই নির্বাচন হবে। এটা নিয়ে গবেষণা বা আলোচনার কিছু নাই।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘কাউকে বাদ দিয়ে নির্বাচন আমরা করতে চাই না। বিএনপিকে নিয়েই আমরা নির্বাচন করব। হ্যাটট্রিক জয় উপহার দেব শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। খেলেই আমরা গোল দেব।’

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।