আসনপ্রতি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন-প্রত্যাশী গড়ে ছয়জন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বাড়ছে। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেও শুরু হয়েছে মনোনয়নের কঠিন হিসাব-নিকাশ। দলটির নীতিনির্ধারণী মহল মনে করছে, এবারের নির্বাচনে প্রত্যেক আসনেই গড়ে ছয়জন মনোনয়ন প্রত্যাশী হবেন। এ সংখ্যা মাথায় রেখে ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় আড়াই হাজার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হতে পারে বলেও ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারণী মহলের ধারণা। তবে, বিএনপি যদি এই নির্বাচনে অংশ না নেয়, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও মনে করেন দলটির শীর্ষনেতারা। ক্ষমতাসীন দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ১ হাজার ৫৬৭ জন। আর ২০০৮ সালে ফরম বিক্রি হয়েছিল ১২ শতাধিক।

ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এবার জরিপ রিপোর্ট ও সাংগঠনিক রিপোর্টের ভিত্তিত্তে তারা ধারণা করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি হবে। গুটিকয়েক আসন ছাড়া বেশিরভাগ আসনেই দুইয়ের বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী কাজ করছেন। অবশ্য প্রার্থী হতে চাওয়ার এই প্রতিযোগিতাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন শাসক দলের শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, মনোনয়ন প্রত্যাশী যত বেশি হবে, দলের প্রচারও ততবেশি হবে। নেতাকর্মীদের মধ্যে ততবেশি উচ্ছ্বাস, উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করবে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের সভাপতির প্রত্যাশা অনুযায়ী সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরবেন। এছাড়া মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে দলের ফান্ডও বাড়বে।

অধিকাংশ আসনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় দল। জনগণের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় দল। আমাদের দলের ব্যাপ্তিও তৃণমূল পর্যন্ত শক্তভাবে বিস্তৃত। অসংখ্য নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে জনকল্যাণে রাজনীতি করে যাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা জনপ্রতিনিধিত্ব করতে চান। যে কারণে জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি।’ প্রতি আসনে গড়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী কতজন হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি আসনেই দুই বা ততধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। এ সংখ্যা কোথাও কম, কোথাও বেশি। তবে, আসনপ্রতি প্রার্থী যতই হোক, যার দলের জন্য অবদান রয়েছে, যিনি জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য ও জয়ী হওয়ার সামর্থ্য রয়েছে, দল তাকেই মনোনয়ন দেবে।’

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য অন্তত ছয়টি জরিপ করা হয়েছে। এসব জরিপ বিশ্লেষণ করে কমিটি প্রতি আসনে উল্লেখ করার মতো গড়ে ছয়জন প্রার্থী পেয়েছে। এমনও আসন আছে, যেখানে সর্বোচ্চ ১৬ জন পর্যন্ত প্রার্থী পাওয়া গেছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছে। দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে আগ্রহী প্রার্থীদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যান ও তথ্য তুলে ধরবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘দলের জনপ্রিয়তা বাড়ার কারণে সমর্থনও বেড়েছে। নেতাকর্মীর সংখ্যা ও প্রত্যাশাও বেড়েছে।’ মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়াকে তিনি স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল। এ দলের হাত ধরেই মুক্তিযুদ্ধসহ জাতি গঠনের সব সোপান গঠিত হয়েছে। এর রয়েছে লাখ লাখ যোগ্য নেতাকর্মী। দলের কাছে মনোনয়ন চাওয়াটা সবার অধিকার।’ তবে, সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিই মনোনয়ন পাবেন বলে মন্তব্য করেন মাহবুব-উল আলম হানিফ।