ইউক্রেনে রুশ অভিযানের মতো তাইওয়ানে চীনা অভিযান শুরু হতে পারে : ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনে জয়ী হতে দেওয়া উচিত নয়। ইউক্রেন যুদ্ধে জয়লাভ করলে তারা (রাশিয়া) অন্য দেশেও ফের আক্রমণ করতে পারে। আবার রাশিয়া থেকে উৎসাহিত হয়ে চীনও তাইওয়ানকে বরবাদ করে দিতে পারে। অর্থাৎ ইউক্রেনে রুশ অভিযানের মতো তাইওয়ানে চীনা অভিযান শুরু হতে পারে।

স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাতে যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক নীতিসংক্রান্ত আলাপকালে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। খবর পলিটিকোর।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর উচিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করা। চীনের হাত থেকে তাইওয়ানকে বাঁচানোর ইঙ্গিত দিয়ে এ কথা বলেছেন তিনি।

ট্রাস বলেন, ইউরো-আটল্যান্টিক ও ইন্দো-প্যাসিফিকের নিরাপত্তা বিষয়ে ন্যাটোর যে অবস্থান যুক্তরাজ্য তা প্রত্যাখ্যান করছে।

তিনি বলেন, আমি বলতে চাচ্ছি যে ন্যাটোর অবশ্যই একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে, বিশ্বব্যাপী হুমকি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিকে হুমকি মুক্ত করতে হবে। প্রশান্ত মহাসাগরকে সুরক্ষিত করার জন্য জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো মিত্রদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে তাইওয়ানের মতো গণতন্ত্র নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম।

গত ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন একই আশঙ্কার কথা বলেছিলেন।

আগামী ২৯ থেকে ৩০ জুন মাদ্রিদে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই সম্মেলনকে ঘিরে জোটটি ‘কৌশলগত ধারণা’ নিয়ে লিজ ট্রাস তাইওয়ান প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের নিরাপত্তা হুমকির ওপর ন্যাটোর নতুন আলোচ্যসূচিতে কতটা জোর দেওয়া উচিত তা নিয়ে জোটের সদস্যদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।

ট্রাস ইতিমধ্যে পশ্চিমা মিত্রদের ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান সরবরাহ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধ ‘আমাদের যুদ্ধ’। কারণ ইউক্রেনের জয় আমাদের সবার জন্য কৌশলগত জয়।

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ভবিষ্যতে তাইওয়ানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে চীন। বিষয়টি মাথায় রেখে তাইপেকে সব ধরনের সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে বেইজিং।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত তাইপের কাছে দুই হাজার কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম ও পরিষেবা বিক্রি করেছে ওয়াশিংটন। অঞ্চলটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরও সামরিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে সহজভাবে নেয়নি বেইজিং। এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস জানায়, তাইওয়ান চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ইস্যুতে ভবিষ্যতে যে কোনো মন্তব্য করা থেকে ওয়াশিংটনের সতর্ক থাকা উচিত।

তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। দীর্ঘদিন ধরেই অঞ্চলটির চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে তারা। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্তব্য আর এবার তাইপের সামরিক খাতে মার্কিন সহায়তার বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছে না বেইজিং।