ইউপি নির্বাচন : বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকার বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে!

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ৬টিতেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীদের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের বিদ্রোহীরা। দুইটিতে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (হাতপাখা) ও একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলেও তাঁরা নীরবে প্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু আওয়ামীলীগে বিদ্রোহী প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। গত ৪ নভেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন পর্যন্ত কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। এদিকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির নেতারা।

উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের এবারও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইমদাদুল হক রানা সরদার। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্যও। তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য জুয়েল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় জনগণের পাশে থেকে সেবা করেছি। তাঁদের অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি।’

অন্যদিকে পাকশী ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী সাইফুজ জামান পিন্টু বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এই ইউপিতে তিনি ছাড়া অন্য কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। গত বৃহস্পতিবার মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিনে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন।

মুলাডুলি ইউনিয়নে নতুন মুখ হিসেবে আব্দুল খালেক মালিথা নৌকার প্রার্থী হয়েছেন। ইউনিয়ন আ’লীগের সহ সভাপতি আব্দুর রহমান ফান্টু মন্ডল ও আওয়ামীলীগের সমর্থক আবদুল্লাহ আল মামুন এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তবে আল মামুনের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে অবৈধ হয়েছে।

দাশুড়িয়া ইউনিয়নে এবারও নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান বকুল সরদার। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শামছুল আলম বাদশা। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন মোসলেম উদ্দীন এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) ইয়াছির আরাফাত। তবে মোসলেমের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে অবৈধ হয়েছে।

ছলিমপুর ইউনিয়নে এবারও নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও। তাঁর প্রধান প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী হচ্ছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নায়েক এম এ কাদের। তিনি এলাকায় বেশ দাপটের সঙ্গে প্রচার চালাচ্ছেন। এ ছাড়াও ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান।

সাহাপুর ইউনিয়নে নতুন মুখ হিসেবে নৌকার মাঝি হয়েছেন আকাল উদ্দিন সরদার। তাঁর প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপনের আপন ভাই এমলাক হোসেন বাবু। এ ছাড়াও ইউনিয়নে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী খাদিজা সুলতানা নিপা এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন জামাল হোসেন।

লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে এবারও নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আনিস উর রহমান শরীফ। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ আনিসুল হক মোল্লা। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, গতবার ইউপি নির্বাচনে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁর মনোনয়ন পত্র পরিবর্তন করে তাঁকে নির্বাচন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এবারও মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দল মনোনয়ন না দেয়ায় তিনি ‘স্বতন্ত্র’ নির্বাচন করবেন। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েব আলী বিশ্বাস বলেন, দলের নির্দেশ অমান্য করে যাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে বিদ্রোহীরা নৌকা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ তুলছেন তাঁদের প্রচারে বাধা দেওয়ার।

পাবনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তাঁকে শাস্তি পেতে হবে’।

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন উপলক্ষে বার্তা দিয়েছেন পাবনা জেলার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘পাবনা জেলা পুলিশ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংকল্পবদ্ধ।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। মনোনয়নপত্র বাছাই ৪ নভেম্বর ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ১১ নভেম্বর। তৃতীয় ধাপে এ ৬টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ হবে ২৮ নভেম্বর।