ইতিবাচক ধারায় ফিরছে রাজনীতি

ইতিবাচক ধারায় ফিরছে রাজনীতি। শেষ হতে চলছে দোষারোপ আর হানাহানির রাজনীতি। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পুরানো বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পরিকল্পনা জনগণের সামনে তুলে ধরে পার হতে চাচ্ছে ‘ভোটের বৈতরণী’।

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আগে দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা ‘ভিশন ২০২১’ পেয়ে ছিল নিরঙ্কুশ বিজয়। বিএনপি সেই পথকে অনুসরণ করে গত বুধবার দিলো নিজ দলের ‘ভিশন ২০৩০’। অনেকেই মনে করছে এই ভিশন দিয়েই বেগম জিয়া ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হতে চায়। ক্ষমতায় আনতে চায় দীর্ঘদিন রাজনৈতিক বেকায়দায় থাকা দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপিকে। আওয়ামী লীগও রূপকল্প-২০২১ এর মত আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মত রূপকল্প-২০৪১ প্রণয়নের কাজ শুরু করছে।

এই ভিশন রাজনীতিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের গঠনমূলক উন্নয়নে রাজনীত বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে দুই দলের ভিশন থেকে একই উন্নয়নের ইস্যু আসবে। যা উন্নত বিশ্বের রাজনীতিতে পরিলক্ষিত হয়।দুই দলের ভিশন বা পরিকল্পনায় অবকাঠামো, শিক্ষা, স্থাস্থ্য, প্রবীণদের জন্য উদ্যোগ, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য কর্মসূচি, আইন সংস্কার, কুটনৈতিক সর্ম্পকসহ বিভিন্ন বিষয়ের সুর্দিষ্ট কর্মসূচি উত্থাপন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলগুলো কেবল রূপকল্প উপস্থাপনই নয়। রাজনৈতিক সমালোচনার ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। আগের মত ঢালাও অভিযোগের বিপরীতে এখন সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে রাজনৈতিক সমালোচনা হচ্ছে।

এদিকে, দেশের প্রধান দুই দলের দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্প উত্থাপনের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একইসঙ্গে তারা স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, আগে ক্ষমতাকালীন সময়ের জন্য স্বল্প মেয়াদের ভিশন থাকতো দলগুলোর। এখন তা পরিবর্তন এসেছে। ক্ষমতাকালীন সময়কে পেরিয়ে দলগুলো এখন দীর্ঘমেয়াদের পরিকল্পনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে এবং জনগনের সামনে উপস্থাপন করছে। দেরিতে হলেও দলগুলো বুঝতে পেরেছে, উন্নয়ন কর্মসুচি ছাড়া পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করে কোন লাভ নেই। এ কারণে দলগুলার ভিশন উপস্থাপন দেশের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক।

রাজনৈতিক দলের রূপকল্প প্রণয়ন নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই চর্চাটি রাজনীতি ও উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক। আগে সরকারে ক্ষমতার মেয়াদ পর্যন্ত অর্থাৎ পাঁচ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো কে কি করবে তা উপস্থাপন করতো। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কোন ভিশন ছিল না। তাই দেশের প্রধান দুট বড় দল যখন দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক রূপকল্প নিয়ে কাজ করছে, তখন অবশ্যই এটি রাজনীতির জন্য, জনগনের জন্য ইতিবাচক। তিনি বলেন, রূপকল্প প্রনয়ন করলেই হবে না। রূপকল্পের বাস্তবায়নও করতে হবে।

তিনি বলেন, গণভোটের পুনঃপ্রর্বতন, প্রধানমন্ত্রীর ভারসাম্য রক্ষা, দুনীর্তি বন্ধ, সংসদে উচ্চকক্ষ প্রণয়ন করা গেলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। তবে অঙ্গিকার বাস্তবায়নে দল অবস্থান শূণ্যের কোঠায়। অঙ্গিকার রক্ষা করতে হলে দলগুলোর স্বদিচ্ছা থাকতে হবে। বাস্তবায়নের জন্য দলগুলোর সমঝোতা থাকতে হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার একটি ইতিবাচক বিষয় হল রাস্ট্রের উন্নয়নে এক বা একাধিক ইস্যু মিলে যাওয়া। এটা বিভিন্ন খাতে খাতেই হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ভিশন দিলেই হবে না। ভিশনের এজেন্ডাগুলোও বাস্তবায়ন করতে হবে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক পর বিএনপি তাদের রাজনৈতিক ভিশন উপস্থাপন করেছে। এতে দলটির পক্ষ থেকে নানা বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ভিশন উত্থাপনের কারণে জনগণের সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের উন্নয়নে কোন ইস্যুগুলো বেশি গুরুত্ব পাবে সেটা জনগণ নির্বাচন করতে পারবে। এখন ভিশন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।