ইভিএম নিয়ে কেন আ’লীগ শরিকদেরও আপত্তি?

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একশ’ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি সংস্থাটি। এনিয়ে ইসির সভাটি একজন কমিশনারের বর্জনসহ নোট অব ডিসেন্টেই ঝুলে গেছে সিদ্ধান্ত।

এদিকে ইসির এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করছে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিকরাও ইভিএম ব্যবহারে আপত্তি জানিয়েছে। জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও সাম্যবাদী দল এ নিয়ে নিজেদের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেছে।

শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ইভিএম নিয়ে জনমনে অনেক সন্দেহ রয়েছে। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া এটা চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মানুষ তো টিপসই দিতে পারে না, ইভিএমে টিপ দেবে কিভাবে? এতগুলো আসনে যদি একসঙ্গে ইভিএম হয়, তবে তার সফলতা নিয়ে আমরা নিশ্চিত নই।’

একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসির ইভিএম উদ্যোগে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রই কার্যত শক্তিশালী হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন যখন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে মাত্র ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নিয়েছে। এতেই এটা স্পষ্ট যে, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন নিজেই এখনো প্রস্তুত নয়। জনগণও সেভাবে প্রস্তুত নয়।’

‘সে কারণেই নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাব ঘোড়ার আগেই গাড়ি জুড়ে দেয়ার সামিল। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এমনকি নির্বাচনকে বানচাল করার যে ষড়যন্ত্র রয়েছে এ ধরনের উদ্যোগ তাকেই শক্তিশালী করবে’ বলে মনে করছে ওয়ার্কার্স পার্টি।

১৪ দলের আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহারে আমাদের আপত্তি নেই। তবে কারো আপত্তি থাকলে সেটা বিবেচনা করা উচিত। কারণ, ইভিএমকে সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হিসেবে দাঁড় করানো উচিত হবে না।’

১৪ দলের আরেক শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে ইভিএম এর ব্যবহার কতটুকু সঠিক হবে? এটা নিয়ে ভেবেচিন্তে অগ্রসর হওয়া উচিত।’

এছাড়া ১৪ দলের আরও দুই শরিক- জাসদের একাংশ ও গণতন্ত্রী পার্টি ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের যেকোনো সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবে। তাদের বক্তব্য, ‘বিষয়টি নিতান্তই কমিশনের। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সমর্থন করব’।

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এমপি বলেন, ‘সিটিনির্বাচনগুলোতে ইভিএম পরীক্ষামূলকভাবে ইতিমধ্যে চালু হয়েছে আমরা দেখেছি। জাতীয় নির্বাচনেও যদি নির্বাচন কমিশন এর ব্যবহার করতে চায়, করবে।’

গণতন্ত্রী পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুর রহমান সেলিম বলেন, ইভিএম নিয়ে ইসি যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা তার পক্ষে। সারা দুনিয়ায় তো এভাবেই ভোটগ্রহণ হয়। আমাদের তো তরুণ প্রজন্মের কাছে এটাকে পরিচিত করাতে হবে।

তিনি বলেন, বিরোধিতার জন্য কেউ তো চালাকি করে নানা রকম কথা বলবেই। আমাদের এ বিষয়ে জনগণের কাছে স্পষ্ট করতে হবে। আর যারা বিরোধিতা করছে, তারাও তাদের বিরোধিতার জায়গাটা স্পষ্ট করুক। এরআগে ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক বর্জন করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি এনিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ও দিয়েছেন। এনিয়ে খোলাখুলিভাবে সাংবাদিকদের কাছে নিজের অবস্থানও ব্যক্ত করেছেন।-পরিবর্তন ডটকমের সৌজন্যে প্রকাশিত।