ইসির সংলাপ : ৪০ দলের ৫৩১ সুপারিশ
নির্বাচন কমিশন তাদের আয়োজিত সংলাপে দেশের ৪০টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে ৫৩১টি সুপারিশ পেয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দলগুলোর স্পষ্ট বিভাজন প্রকাশ পেয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলেছে। বিপরীতে বিএনপি ও তার মিত্ররা বর্তমান অর্থাৎ নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচনে আপত্তি জানিয়েছে।
জাতীয় পার্টিসহ তিনটি দল সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। সিপিবিসহ ১২টি দল বলেছে, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এসব প্রস্তাব এলেও সংবিধানের বাইরে গিয়ে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের এখতিয়ার ইসির নেই। তবে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, যে সব প্রস্তাবে তাদের করার কিছু নেই, তা সরকারকে দেবেন তারা।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়েও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ১৯টি দল সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছে, তার মধ্যে বিএনপিসহ কয়েকটি সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিতেও বলেছে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইসির এখতিয়ারের মধ্যে থাকা অভিন্ন সুপারিশই রয়েছে বেশি।
গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর আগামী বছর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিতে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি।
গত ২৪ অগাস্ট শুরুর পর ১৯ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের যবনিকা টানে ইসি। বিএনপির প্রশ্ন নিয়ে শপথ নেয়ার পর সংলাপ শেষ করতে পেরে নির্ভার দেখা গেছে নির্বাচন কমিশনারদের।
ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা বেশ সফলভাবে রাজনৈতিক দলের সংলাপ শেষ করেছি। সবাই খুব আন্তরিক ছিলেন, আমরাও সহায়তা পেয়েছি। সুচারু ও সফলভাবে সংলাপ সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে বর্তমান ইসি স্বস্তি বোধ করছেন।
হেলালুদ্দীন বলেন, সবার সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছি। এরপর সুপারিশগুলো একীভূত করা হবে। যেসব সুপারিশ ইসির এখতিয়ারের মধ্যে থাকবে এবং অভিন্ন হবে-তা কমিশন একীভূত করবে। যেসব সুপারিশ এখতিয়ারের বাইরে রয়েছে, রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে, সেগুলোও একীভূত করে কমিশনের সার্বিক বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে।
এদিকে, সিইসি নূরুল হুদা আগেই বলেছেন, সংলাপ শেষে সবার প্রস্তাব একীভূত করে আমরা একটি প্রতিবেদন তৈরি করব। যেসব বিষয় আমাদের এখতিয়ারে নেই, সেগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনে সরকারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
দলগুলোর যত সুপারিশ :
১. সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট: ইভিএমে আপত্তি, বিদায়ী সিইসিকে নিয়ে ইসি পুনর্গঠনের জাতীয় পরিষদ গঠন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার অন্যতম। দলটি পাঁচটি দফায় সুপারিশগুলো করে।
২. মুসলিম লীগ বাংলাদেশ: সংসদ ভেঙে তত্ত্বাবাবধায়ক বা সহায়ক সরকার, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারসহ ১১ দফা সুপারিশ।
৩. খেলাফত মজলিশ: সহায়ক সরকার, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, নিবন্ধন শর্ত শিথিল, নির্বাচনী ব্যয় চারগুণ বাড়িয়ে ১ কোটি টাকা, ইভিএম ব্যবহার না করাসহ ২৪ দফা সুপারিশ।
৪. বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি: ইভিএমের বিপক্ষে, না ভোটের পক্ষে, সমঝোতার ভিত্তিতে তদারকি সরকার, ভোটার অনুপাতে সীমানা পুনঃনির্ধারণ, তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেয়াসহ ২৩ দফা সুপারিশ।
৫. জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা: নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা, সংসদ ভেঙে ভোট, ইভিএম বাতিল, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনসহ ১৪ দফা সুপারিশ। দলটির প্রস্তাব হচ্ছে- নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা বাতিল করে তিন মাসের অবকাশকালীন ছুটি দেওয়া যেতে পারে। সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, সাবেক বিচারপতি এবং দেশের বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে সৎ-গ্রহণযোগ্য নির্দলীয় ব্যক্তি দ্বারা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে।
৬. বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট: সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইসির অধীনে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে রাখা ও নির্বাচনী বিতর্কের ব্যবস্থা রাখা, দলের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা বাতিলসহ ১০ দফা সুপারিশ।
৭. ইসলামী আন্দোলন: সেনা মোতায়েন, সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন সরকার, ইভিএম না রাখা, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন, সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যর্থ হলে ইসিকে আইনের আওতায় আনাসহ ১৫ দফা সুপারিশ।
৮. খেলাফত মজলিশ: সেনা মোতায়েন, ধর্মবিরোধী কোনো দলকে নিবন্ধন না দেয়া, ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন না করা, একই পোস্টারে সব প্রার্থীর পরিচয় ও প্রতীক, একই মঞ্চে প্রার্থীদের বিতর্ক আয়োজনসহ ১৫ দফা সুপারিশ।
৯. কল্যাণ পার্টি: সেনাবাহিনী মোতায়েন, সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা ও কোনো জোটের প্রার্থীদের শরীক দলের যে কোনো প্রতীকে নির্বাচন করাসহ ৮ দফা সুপারিশ।
১০. ইসলামী ফ্রন্ট: সংসদে ভেঙে ভোট, ইভিএম ও না ভোট চালু, তিন ধাপে ৩০০ আসনে ভোট, সব নির্বাচনী ব্যয় নির্বাচন কমিশনের বহন, তফসিল ঘোষণার পর গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করাসহ ১২ দফা সুপারিশ।
১১. ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন: জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিপক্ষে মত দিয়েছে দলটি। সেই সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলের নিবন্ধন বাতিল, ভোটার সংখ্যা অনুপাতে সীমানা পুননির্ধারণসহ ১০ দফা সুপারিশ।
১২. বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি): বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন, না ভোট, প্রতি বিভাগের জন্য একদিন করে ভোট আয়োজনসহ ১২ দফা সুপারিশ।
১৩. বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ): নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চলমান সংসদ বিলুপ্ত করা ও বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ ২১ দফা সুপারিশ।
১৪. প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি): বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, সংসদ ভেঙে ভোট, ‘না’ ভোট চালুসহ ১৬ দফা সুপারিশ। প্রধানমন্ত্রীকে ঐচ্ছিক ছুটি দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নির্বাহী প্রধান করে অপরাপর কমিশনার এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা ও সরকারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব।
১৫. গণফ্রন্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, ইভিএম চালু, ধর্মবিরোধী দলের নিবন্ধন বাতিল, সংসদীয় আসন বাড়ানোসহ ১২টি প্রস্তাব। গণফ্রন্ট বলেছে, বর্তমান সরকারকে সংবিধান সংশোধন করে হলেও (তত্ত্বাবধায়ক নয়, অরাজনৈতিক সরকার নয়) একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। স্বাধীনতার পরে যেসকল নিবন্ধিত দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল, তাদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা যেতে পারে।
১৬. গণফোরাম: জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকার ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতসহ ২২ দফা সুপারিশ। দলটি সুষ্ঠু ভোটে আয়োজনে ‘মানি পাওয়ার’ ও ‘মাসল পাওয়ার’- এই দুটিকে অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করে।
১৭. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম: কমিটিতে ৩৩% নারী চায় না জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুর্নবহাল, সেনাবাহিনী নিয়োগ ও নির্বাচনে সবার জন্যে সমান সুযোগ তৈরিসহ ১১ দফা দাবি উপস্থাপন।
১৮. ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি: ভোটের সময় দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার চায় এনপিপি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার ও সেনা মোতায়েনের বিপক্ষেও মতসহ অন্তত ১২টি সুপারিশ।
১৯. বাংলাদেশ মুসলিম লীগ: আগে সংসদ বিলুপ্ত করে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন, নিবন্ধিত প্রত্যেকটি দলের একজন প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, ইভিএম ব্যবহার না করাসহ ২৪ দফা প্রস্তাব।
২০. বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন: তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল, সেনাবাহিনী মোতায়েন, দলের কমিটিতে নারী রাখার বিধান বাতিল এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের নির্বাচনে অযোগ্য করাসহ ৩৮টি সুপারিশ।
২১. তরীকত ফেডারেশন: নির্বাচনকালীন সরকারে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে চায় তরীকত। ইভিএম পদ্ধতি চালু, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সেনা মোতায়েনসহ ১২ দফা প্রস্তাব।
২২. বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ): সংসদ ভেঙে অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে ভোট, প্রতি তিন আসনে একজন নারী সদস্যের অংশগ্রহণ, ইভিএম চালুসহ ১৩ দফা প্রস্তাব।
২৩. জাকের পার্টি: জাতীয় ঐক্য তৈরি, ইভিএম ব্যবহার, ইসির বাজেট বাড়ানোসহ ২৭ দফা প্রস্তাব।
২৪. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি): সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন সরকার, সেনা মোতায়েন, না ভোটসহ ১৪ দফা প্রস্তাব। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে সংসদ নির্বাচনের সূচি যাতে ভন্ডুল না হয় সেজন্য সরকারের কাছে ইসিকে সুপারিশ করতে বলেছে দলটি।
২৫. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ: বর্তমান আসন সীমানা রাখা, দলের অনুদান আয়করমুক্ত করা, হলফনামার বিধান বাতিলসহ ১৭টি সুপারিশ।
নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর কেউ যেন বিএনপি বা অন্য দলের হয়ে ভোটে অংশ নিতে না পারে, সেই জন্য ইসির তৎপরতা চেয়েছে দলটি।
২৬. জাতীয় পার্টি: বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা দলের প্রতিনিধিদের দিয়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন, সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন, ভোটারের ভিত্তিতে সীমানা পুনর্র্নিধারণসহ ৮ দফা সুপারিশ।
২৭. বিকল্পধারা বাংলাদেশ: নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মতবিরোধ নিরসনে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠন, সীমানা পুনর্র্নিধারণ না করা, বিচারিক ক্ষমতা ছাড়া সেনা মোতায়েন, না ভোট চালুসহ ১৩ দফা সুপারিশ।
২৮. ইসলামী ঐক্যজোট: জাতীয় নির্বাচনে ঢালাওভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করে ‘স্পর্শকাতর’ এলাকায় মোতায়েন, অভিন্ন পোস্টারসহ ১১টি প্রস্তাব।
২৯. বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি: বর্তমান সরকারের অধীনে সংসদ বহাল রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচন, ইভিএম ব্যবহার এবং ঢালাওভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করাসহ ১৪টি প্রস্তাব।
৩০. বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি: বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সেনা মোতায়েন, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোট এবং নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন বরাদ্দ, ‘না’ ভোট চালু, এনবিআর ও দুদকের মাধ্যমে যাচাইসহ ১৬ দফা সুপারিশ।
৩১. বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি): সংসদ ভেঙে নির্বাচন, ভোট অনুযায়ী সংসদে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ ব্যবস্থা চালু, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০ তে উন্নীত করাসহ ১৭ দফা সুপারিশ।
৩২: গণতন্ত্রী পার্টি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ধর্মভিত্তিক দলের নিবন্ধন বাতিলসহ ২১ দফা সুপারিশ।
৩৩. বিএনপি: নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে ‘সহায়ক সরকার’ এর অধীনে ভোটের প্রস্তাব বিএনপির। ভোটের সময় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, ২০০৮ সালের আগের সংসদীয় আসন সীমানা ফিরিয়ে আনা, ইভিএম চালু না করা, জরুরি অবস্থার সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দলীয় চেয়ারপারসনসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকরা সব মামলা প্রত্যাহারসহ ২০টি সুপারিশ।
৩৪. কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ: সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাস, ভোটের সময় সেনা মোতায়েন, ইভিএম চালুসহ ১৮ দফা সুপারিশ করেছে দলটি।
৩৫. বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার, বিদ্যমান সংসদীয় আসনেই ভোট, ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে লালন-পৃষ্ঠপোষকতা করে এমন দলের নিবন্ধন বাতিল, ইভিএম চালু, না ভোট চালুসহ ১৭ দফা সুপারিশ।
৩৬. বাংলাদেশে ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ): শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকেও রাখার প্রস্তাব দলটির। বিএনপিকে মন্ত্রিত্ব দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংলাপসহ ৫ দফা সুপারিশ।
৩৭. বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি: সংসদ নির্বাচনে ভোটের ১০ দিন আগে থেকে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন করে ভোট ও ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা স্থাপনসহ দলটি ৫ দফা সুপারিশ করে।
৩৮. আওয়ামী লীগ: সেনা মোতায়েন, সীমানা পুনর্র্নিধারণের বিপক্ষে ও ইভিএমর পক্ষে সুপারিশসহ ১১ দফা প্রস্তাব। দলটি বলেছে, ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন এবং ইসি নির্ধারিত ভোটের পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর ওপর ন্যস্ত থাকবে।
৩৯: জাতীয় পার্টি-জেপি: সেনা মোতায়েন, ইভিএমের বিপক্ষেসহ ৮ দফা সুপারিশ।
৪০. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি: সেনা মোতায়েনের পক্ষে ও শর্তসাপেক্ষে ইভিএম চালু ও সীমানা বহালসহ ১২ দফা সুপারিশ।
অভিন্ন যেসব প্রস্তাব:
সব দলের অংশ গ্রহণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, নিরপেক্ষতা নিশ্চিত; প্রচারে সরকারি সুবিধা বাদ; কালো টাকা ও পেশীশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন; প্রবাসীদের ভোটাধিকার; অনলাইনে মনোনয়ন জমা; গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের তৎপরতা বন্ধ; স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় ১% সমর্থন তালিকা বাতিল; স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্ত রাখা; নিবন্ধিত দলকে রাষ্ট্রীয় অনুদান, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ও জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত ব্যক্তি, মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করা; ফৌজদারি দন্ডাদেশ প্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেয়া; নির্বাচনে ধর্মের সর্বপ্রকার ব্যবহার, সাম্প্রদায়িক প্রচার প্রচারণা ও ভোট চাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে নিষিদ্ধ করা; স্বাধীনতা বিরোধী ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দলকে নিবন্ধন না দেয়া ; প্রার্থীর নাম, দল ও প্রতীকের উল্লেখ সম্বলিত অভিন্ন পোস্টারের ব্যবস্থা করা; নির্বাচনী বিরোধ তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা, নির্বাচন কালো টাকা ও পেশি শক্তির প্রভাবমুক্ত রাখা, নৈতিক স্খলনের অভিযোগে দন্ডিতদের দুই বছর পর সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার সুযোগ বাতিল করা, যে সব দল ৩০ এর বেশি প্রার্থী মনোনয়ন দেবে সে সব দলকে বেতার ও টিভিসহ সরকারি প্রচারমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুযোগ দেয়া, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা- কর্মচারীদের কমিশন থেকে প্রত্যাহার করা প্রভৃতি।
ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ:
একটি দল বলেছে, প্রত্যেক নির্বাচনী কেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করবেন- ইউএনও, ওসি, প্রিসাইডিং অফিসার, সেনাবাহিনীর সদস্য তারা জনসমক্ষে প্রকাশ্যে পবিত্র কোরআন/গীতা/বাইবেল/ত্রিপিটক ছুঁয়ে নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতার শপথ নিতে হবে।
নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আপত্তি:
২০২০ সালের মধ্যে ৩৩% সম্ভব না বলে মত দিয়েছে একটি দল, খেলাফত মজলিশ, ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্বের বিধান বাতিলের সুপারিশ ইসলামী ফ্রন্ট, কমিটিতে ৩৩% নারী চায় না জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং সংসদ ও দলে নারীর বিধান বাতিল চায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।
সংলাপ বয়কট:
বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা’র প্রসঙ্গ টেনে আনায় সিইসির সঙ্গে সংলাপ বয়কট করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। সেই সঙ্গে দলটি সিইসি কে এম নূরুল হুদার পদত্যাগ দাবিও করে কাদের সিদ্দিকী নেতৃত্বাধীন দলটি।
তবে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, দলটি প্রায় তিন ঘণ্টা সংলাপ করে খাওয়া দাওয়া করে বেরিয়ে সংলাপ বর্জনের যে ঘোষণা দিয়েছে, তা গণমাধ্যমের দৃষ্টি কাড়তেই করেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন