ফোরজি আসতে যত বাধা

চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক তথা ফোরজি’র আগমন পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মোবাইলফোন অপারেটররা তাদের দাবির কথা জানিয়ে বলছে, ফোরজি নিলামের আগেই বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি। এদিকে সরকার বলছে, অপারেটরগুলোর উত্থাপিত ২৪টি দাবির মধ্যে ২২টিই সমাধান হয়ে গেছে। যে দুটো অবশিষ্ট রয়েছে, তারও সমাধান শিগগিরই হয়ে যাবে। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে অপারেটররাও আশাবাদী।

প্রসঙ্গত, গত বছরের শুরুর দিকে জানা যায়, দেশে ফোরজি আসছে। কিন্তু ওই বছর তরঙ্গের নিলাম আয়োজনও করা সম্ভব হয়নি। একই বছরের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, ২০১৭ সালে সারাদেশে ফোরজি চালু হবে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ২০১৭ সালে দেশে ফোরজি চালুর পদক্ষেপ হিসেবে স্পেক্ট্রামের নিলাম অনুষ্ঠিত হবে এবং বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই এই সেবা চালু করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, থ্রিজি সেবা চালু করে মোবাইল অপারেটরগুলোর একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। বিশাল অংকের অর্থ বিনিয়োগ করে সেই অর্থ এখনও বিনিয়োগেই এক প্রকার আটকে আছে। আবারও প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বলে তাদের আশঙ্কা, বিদ্যমান ইস্যুগুলোর সমাধান না করে আগের পথে হাটলে একই ধরনের জটিলতায় পড়তে পারে টেলিযোগাযোগ খাত।

উল্লেখ্য, থ্রিজিতে মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ছয় হাজার কোটি টাকা ফেরত পেয়েছে বলে অপারেটরগুলোর দাবি।

জানা গেছে, মোবাইল অপারেটররা, ১২ বছর ভয়েস কলের রেকর্ড সংরক্ষণ, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল খরচ করার আগে অনুমতি নেওয়া, উচ্চ তরঙ্গমূল্য, প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা,কনটেন্ট ফিল্টারিং, লোকেশন পিন পয়েন্ট ইত্যাদি বিষয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি অপারেটরগুলোকে ব্যাখ্যা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা তাদের (মোবাইলফোন অপারেটর) কনসার্ন (আপত্তির বিষয়গুলো) নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছি। এখনও সেই ধারাটা অব্যাহত আছে। বিটিআরসি তাদের বিষয়গুলো ‘এক্সপ্লেইন’ করেছে। সেটা নিয়েও আমরা অপারেটরগুলোর সঙ্গে বসবো। আমরা তাদের প্রতিটি কনসার্নের জায়গায় ‘অ্যাড্রেস’ করেছি। যেগুলো তাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন, সেগুলোর ব্যাখ্যা আমাদের কাছে এসেছে। আমরা তাদের নিয়ে বসবো।’

তিনি জানান, তারা (মোবাইলফোন অপারেটররা)যে কনসার্নগুলো আমাদের জানিয়েছেন, তার বেশিরভাগই সমাধান হয়ে গেছে। যে দুই-একটা বাকি রয়েছে সেসবও সমাধান হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপারেটরগুলো ২৪টি ‘কনসার্ন’ দিয়েছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে। এর মধ্যে ২২টিরই সমাধান হয়েছে গেছে বলে বিভাগ থেকে দাবি করা হয়েছে।

মোবাইলফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের এক পদস্থ কর্মকর্তা নিজেকে উদ্ধৃত না করে বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলসহ (এসওএফ) যে বিষয়গুলো এখনও সমাধান হয়নি তা নিলামের আগেই হওয়া জরুরি।’ তিনি এসওএফ -এর অর্থ খরচ করার বিষয়ে অনুমতি নেওয়ার বিষয়ে বলেন,‘এটা জটিলতা তৈরি করবে এবং জটিলতা বাড়াবে। এটারও সমাধান হওয়া জরুরি।’

বাংলালিংকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক তাইমুর রহমান বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, যে দুই-একটি সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধান হয়ে যাবে।’ তার আশা, তরঙ্গমূল্য (স্পেক্ট্রাম) আরও কমবে। তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা সব সময়ই জানিয়ে থাকি, কোথায় আমরা এই টাকা খরচ করছি। কিন্তু অনুমতি নিয়ে খরচ করার বিষয়টিতে জটিলতা দেখতে পাচ্ছে অন্য অপারেটররাও। এটার একটা যৌক্তিক সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।’সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন