‘ইয়াবা দিয়ে ভবিষ্যৎ​ প্রজন্ম ধ্বংস করতে চায় মিয়ানমার’

কয়েক দিনের তীব্র দাবদাহে কক্সবাজার উপকূলের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। এর মধ্যেও ইয়াবাবিরোধী সমাবেশে বক্তব্য শুনতে মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সমবেত হন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। যার অর্ধেক নারী। বুধবার বিকেলে পুলিশের মাদক ও জঙ্গিবাদবিরোধী এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।

সমাবেশে শহীদুল হক বলেন, ‘টেকনাফ সীমান্ত দিয়েই ইয়াবার চালান দেশে আসছে। টেকনাফের ওপারে মিয়ানমার। সেখানেই উৎপাদিত হচ্ছে ইয়াবা। অথচ সেখানকার কেউ ইয়াবা সেবন করে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ মিয়ানমারের ইয়াবা সেবন করে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছে। তাই যেকোনো মূল্যে ইয়াবাসহ মাদক চোরাচালান রুখে দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার চায় ইয়াবা দিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ​ প্রজন্মকেও ধ্বংস করতে। তাই মাদকের বিরুদ্ধে টেকনাফবাসীকে সোচ্চার হতে হবে।’

আইজিপি বলেন, ‘টেকনাফের সবাই ইয়াবা ব্যবসা করে না। যারা ইয়াবা ব্যবসা করে, আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করেও হাজার হাজার নারী-পুরুষ মাদকবিরোধী সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। বিশেষ করে রক্ষণশীল এলাকা টেকনাফের কয়েক হাজার নারীর এই সমাবেশে উপস্থিত দেখে অবাক হলাম। আমরা যেকোনো মূল্যে টেকনাফকে ইয়াবামুক্ত দেখতে চাই।’

আইজিপি উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে জানতে চান, ‘আপনারা কি ইয়াবামুক্ত টেকনাফ চান?’ জবাবে নারী-পুরুষ সবাই হাত তুলে ‘হ্যাঁ’ ‘হ্যাঁ’ বলে চিৎ​কার করেন। এরপর তিনি বলেন, ‘আপনারা কি টেকনাফকে জঙ্গিমুক্ত দেখতে চান?’ লোকজন বলেন ‘হ্যাঁ।’

১৩ কিলোমিটার দূরের শাহপরীর দ্বীপ এলাকা থেকে এ সমাবেশে আসা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জাহেদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ইয়াবা টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে ঢুকে সারা দেশ সয়লাব হচ্ছে। হাজারখানেক ব্যক্তি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত হলেও বদনাম হচ্ছে জেলার ২৬ লাখ মানুষের। আমরা আর এই বদনামের ভাগীদার হতে চাই না। আমরা চিরতরের জন্য ইয়াবা ব্যবসার নির্মূল চাই।’

এ আসনের সাংসদ আবদুর রহমান বদি। গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিদের তালিকায় সাংসদ বদির পাঁচ ভাইসহ নিকটাত্মীয় অন্তত ২৫ জনের নাম ছিল। তবে আজকের সমাবেশে ছিলেন না সাংসদ। সমাবেশে তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে উপস্থিত লোকজনের মাঝে ব্যাপক আলোচনা হয়। পুলিশের আমন্ত্রণপত্রেও তাঁকে অতিথি করা হয়নি। অথচ সাংসদ আজ টেকনাফেই ছিলেন।

আজকের সমাবেশে টেকনাফ কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ছাড়া অন্য কেউ বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাননি। এ নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শফিক মিয়া বলেন, মাদকবিরোধী সমাবেশে টেকনাফের কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। কারণ, ইয়াবা ব্যবসায় কারা জড়িত, তা ফাঁস হবে।

আজকের সমাবেশে অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাংসদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি।

তবে টেকনাফ পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলম বাহাদুর বলেন, সাংসদ পদমর্যাদায় বড়, তাই তিনি সমাবেশে যোগ দেননি। তবে তিনি বিপুলসংখ্যক লোকজন সেখানে পাঠিয়েছেন। ইয়াবাবিরোধী সমাবেশের অভিনন্দন জানিয়ে পৌর শহরে একাধিক তোরণ নির্মাণ করেছেন।