‘ইয়াহিয়ার মতো আজকের স্বৈরাচারকেও আত্মসমর্পণ করতে হবে’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে বঙ্গবীর খ্যাত কাদের সিদ্দিকী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, একাত্তর সালে ইয়াহিয়া খানের মতোই আজকের স্বৈরাচারদেরকেও আত্মসমর্পণ করতে হবে।
সোমবার দুপুরে মতিঝিলে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের কার্যালয়ের সামনে এক অনুষ্ঠান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করেন তিনি।
ওই অনুষ্ঠানে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের সামনে যদি পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খান আত্মসমর্পণ করে, তাহলে আজকের স্বৈরাচারকেও আত্মসমর্পণ করতে হবে।’
‘‘আমি ঘোষণা করছি আজ এই মুহূর্ত থেকে আমরা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যোগ দিচ্ছি। দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনের জন্য আজকে আমাদের এই সিদ্ধান্ত।’’
আজকের দিনটিকে তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটি দিন বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব, সুলতান মুহাম্মদ মনসুরদের মতো মুক্তিযোদ্ধা পাশে থাকলে এই লড়াইয়ে কেউ হারাতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বহুদিন আগে সংলাপ করতে বলেছিলেন উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘তখন কিন্তু তিনি রাজি হননি। এখন রাজি হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যে মুহূর্তে আলোচনায় বসেছেন, সে মুহূর্তে হলেও দেশের পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। কাদের সাহেব আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কাউকে দেখতেন না। এখন দেখছেন। কথায় এখন ভারসাম্য এসেছে। আমি এটাই চেয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো ভয় নেই। এই লড়াইয়ে আমরা সমস্ত মেধা, সাহস শক্তি দিয়ে ঐক্যফ্রন্টকে সহায়তা দেব। দেশের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করবো।’
এ সময় ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের জন্য কাদের সিদ্দিকীসহ দলের সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘আজকের দিনটি দেশের ইতিহাসে ল্যান্ডমার্ক হয়ে থাকবে। আজকে দেশের জন্য ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছেন। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পেছনে তার অবদান অসামান্য। আজ তাকে অভিনন্দন জানাই। আমাদের এই লড়াই গণতন্ত্রের লড়াই। এই লড়াই ভোটাধিকার উদ্ধারের লড়াই। আমরা সবাই মুক্তিয়োদ্ধা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বেঁচে থাকার কথা ছিল না। কাদের সিদ্দিকীর বেঁচে থাকার কথা ছিল না। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আমরা বেঁচে আছি। এখন মানুষের অধিকার নেই। আজকে কাদের সিদ্দিকীর যোগদানের মধ্য দিয়ে আমাদের লড়াইয়ের মাত্রা বেড়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী, আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে। আপনাদের পায়ের তলায় মাটি নাই।’কাদের সিদ্দিকী
রব বলেন, ‘কিসের ইভিএম? ভোট চুরির জন্য? ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। দাবি মানতে হবে। নির্বাচন করতে চাইলে দাবি মানতে হবে। আর যদি নির্বাচন না করতে চান এবং দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চান, তাহলে সকল দায় সরকারকে নিতে হবে।’
এসময় কাদের সিদ্দিকীর হাত ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা দুই ভাই এক হয়েছি। একসাথে লড়াই করব আমরা। এই লড়াই গণতন্ত্রের লড়াই। এই লড়াই চলবে।’
কাদের সিদ্দিকীকে ঐক্যফ্রন্টে অভিনন্দন জানিয়ে এ সময় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাই। আগামী দিনে গণতন্ত্রের আন্দোলন আরো জোরদার হবে৷ যারা গণতন্ত্র দেখতে চায়, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় আজকে তার যোগদানের মধ্য দিয়ে এই আন্দোলন আরো জোরদার হবে ‘
এ সময় গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসীন মন্টুও কাদের সিদ্দিকীকে অভিনন্দন জানান৷
উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঐক্যফ্রন্ট সমন্বয় কমিটির মোহাম্মদ শাহজাহান ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মুহাম্মদ মনসুর, সুব্রত চৌধুরী, আ ও ম শফিকউল্লাহ প্রমুখ।
গত ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি এবং নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এরই মধ্যে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ ঘোষিত ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্যে আন্দোলন করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
সম্প্রতি এ জোট আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়ে সংলাপে অংশ নেন।
গত বৃহস্পতিবার গণভবনে সেই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সংলাপের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দাবি করে, বিশেষ কোনো সমাধান হয়নি। আন্দোলন চলবে।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় সংলাপের জন্য বুধবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন