এই ঋণের প্রয়োজন ছিল না

ভারতের সঙ্গে সর্বশেষ সাড়ে চারশ’ কোটি ডলার বা ৩৬ হাজার কোটি টাকার যে ঋণচুক্তি (লাইন অব ক্রেডিট বা এলওসি) স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ, এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হল, এ ঋণের প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নসাপেক্ষ। প্রথম কথা হল, বৈদেশিক ঋণ কেন নেয়া হয়? ঋণ নেয়া হয় ফরেন এক্সচেঞ্জের জন্য। কিন্তু আমাদের হাতে তো ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। ফরেন এক্সচেঞ্জের জন্য আমাদের আপাতত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। এ জন্য এখন বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন নেই।

তবে ভারতের সঙ্গে এ ঋণচুক্তির একটি ইতিবাচক দিক হল, এতে সুদের হার কম। তারপরও ৭৫ ভাগ কনসালটেন্সি ভারত থেকে নিতে হবে এবং এ ঋণ দিয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর প্রয়োজনীয় মালামালও দেশটি থেকে নেয়ার যে শর্ত রয়েছে তাতে প্রতিযোগিতা না থাকায় পণ্যের মূল্য এবং অন্যান্য ফি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি হবে। এ কারণে ইফেকটিভ বা নামীয় সুদহার বেশি হবে। এর বাইরে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে আমরা ঋণ পাই, সেখানে কমিটমেন্ট ও ডিসবার্সমেন্ট হয় না। ফলে অন্য দেশ থেকে এলওসি ধরনের ঋণ নেয়ার চেয়ে সংস্থার ঋণই ভালো।

ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় হল, আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাব। যেখানে ভারত থেকে নেয়া প্রথম একশ’ কোটি ডলার ঋণের প্রকল্পগুলোর কাজই এখনও শেষ করা সম্ভব হয়নি, দ্বিতীয়বারের দু’শ কোটি ডলার ঋণের প্রকল্পগুলোতে তো হাত দেয়াই সম্ভব হয়নি, সেখানে তৃতীয়বারের মতো ৪৫০ কোটি ডলারের আরেকটি ঋণচুক্তি করে নিজেদের ঋণের বোঝা বাড়ানোর কারণটা একেবারেই পরিষ্কার নয়।

ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঋণ নেয়ার থেকেও আমাদের বেশি প্রয়োজন অন্য দুটো বিষয়- যার একটি হল ভারতের বাজারে আমাদের রফতানি পণ্য প্রবেশে শুল্কবহির্ভূত বাধাগুলো দূর করা। দেশটিতে পণ্য রফতানিতে অ্যান্টি-ডাম্পিং, কাউন্টার ভেইলসহ নানা বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের রফতানিকারকদের। যেমন- আমাদের বিএসটিআই’র পণ্য-পরীক্ষাকে তারা গ্রহণ না করে চেন্নাইয়ে পুনরায় পরীক্ষার জন্য পাঠায়। এভাবে সময়-অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি নানা হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে রফতানিকারকদের।

দ্বিতীয় বিষয়টি হল, ভারত থেকে আমাদের কাক্সিক্ষত খাতে বিনিয়োগ নিয়ে আসা। এ দুটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন না এলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারত থেকে আমাদের খুব বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। অথচ মিডিয়ার প্রতিবেদনগুলোতে এ দুটি বিষয়ে অগ্রগতির কোনো খবরই দেখতে পাইনি। ভারত থেকে নেয়া ঋণ, ঋণের শর্ত, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের সক্ষমতা বিবেচনায় নিলে এ ঋণ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই বলেই আমার মনে হয়।

ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম
অর্থনীতিবিদ,
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা