এই সংসদ সর্বকালের সবচেয়ে কার্যকর : সংসদে এমপিরা

জাতীয় সংসদের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে দেয়া বক্তব্যে এমপিরা দাবি করেছেন, বর্তমান সংসদ সর্বকালের সবচেয়ে কার্যকর সংসদ। একইসঙ্গে এই সংসদ সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে মাইলফলক অর্জন করেছে। সোমবার জাতীয় সংসদের পয়েন্ট অব অর্ডারে এসব কথা বলেন সরকার ও বিরোধী দলের এমপিরা।

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ বিষয়ে সূচনা বক্তব্য দেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। পরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর করিম সেলিম, আবদুল মতিন খসরু, বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

আ স ম ফিরোজ বলেন, নবম সংসদের কার্যদিবস ছিল ৪১৮ দিন। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন ৩৩৬ দিন। আর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১০ দিন। দশম সংসদে এ পর্যন্ত ৩৪২ কার্যদিবস অতিবাহিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন ২৮৪ দিন। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন ২০৪ দিন। এই সংসদে এর মধ্যে পাস হয়েছে ১৩১টি বিল।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই সংসদ খুব সফল সংসদ। গালিগালাজ, অসাংবিধানিক বক্তব্য দেয়ার সংসদ এটি নয়। এই পার্লামেন্ট নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিল। বিএনপিসহ কয়েকটি দল অংশ না নেয়ায় অনেকে বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। প্রশ্ন তুলেছিল তারা, যারা তাদের জীবনে দুয়েকটি নির্বাচন করেছেন, সেখানে তারাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যেমন ড. কামাল হোসেন। আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলাম, দেখেছি। তার (ড. কামাল) নির্বাচন করা লাগে নাই। তিনি যখন দুয়েকটা নির্বাচন করেছেন জয়ী হতে পারেননি। তিনি যখন বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তখন অবাক এবং বিস্মিত হই।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, একটি দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তারা খুব অনুশোচনা করে। আমরা সবসময় চাই সংসদ কার্যকর হোক। বাজেট অধিবেশনে সরকারি দল-বিরোধী দল একই সুরে সমালোচনা করেছে। আমরা জবাব দিয়েছি। অত্যন্ত সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কেউ একদিনও অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেনি।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত নির্বাচন। খালেদা জিয়া নির্বাচন বর্জনের ডাক দিলেও জনগণ তাতে সাড়া দেয়নি। এই সংসদের দিকে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে ও গণতন্ত্রের কল্যাণে এই সংসদ কাজ করছে। কারা নির্বাচনে আসলো, কারা আসলো না সেটা তাদের বিষয়। সত্তরের নির্বাচনে তৎকালীন দেশের দ্বিতীয় প্রধান দল মাওলানা ভাষানীর নেতৃত্বে বর্জন করলেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বলেই দেশ স্বাধীন হয়।

বিরোধী দলের নেতা কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, এ সংসদ অতীতের সবগুলো সংসদের চেয়ে কার্যকরী। আমরা জাতীয় পার্টি একটি কার্যকরী বিরোধী দল হিসেবে কাজ করেছি। আমরা সংসদে সমালোচনাও করেছি আবার প্রয়োজনে সমর্থনও করেছি।

তিনি বলেন, এ সংসদ অতীতের সব সংসদ থেকে অনেক কার্যকরী। অতীতের প্রত্যেকটি সংসদে কোনো কাজ হয়নি। বিরোধী দল হিসেবে সংসদে নাম সই করে ঢুকে কোনো না কোনো অজুহাতে সংসদ বর্জন করেছেন তারা। তাছাড়া সংসদে এমন সব খিস্তি-খেউর করেছে, অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেছেন যাতে স্পিকারকে অনেক কথা এক্সপাঞ্জ করতে হয়েছে। অথচ এ সংসদে আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি-নীতি মেনে অংশগ্রহণ করেছি। তবে সরকারের অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বিরোধী দল বঞ্চিত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ২০১৪ সালে জাপা সংসদ নির্বাচনে না অংশ নিত তাহলে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হতো। ৯১ সালে আওয়ামী লীগ, ৯৬ সালে বিএনপি এবং ২০০১ সালে আবার আওয়ামী লীগ এবং ২০০৯ সালে বিএনপি সংসদ বর্জন করেছিল।

ওই সময়ের সবগুলো সংসদকে অকার্যকর হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে এই সংসদই কার্যকরভাবে চলছে। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ না নিলে দেশে গৃহযুদ্ধ হতো।

তিনি বলেন, একটি কার্যকরী বিরোধী দল হিসেবে জাপা সবসময় অংশ নিয়েছে। আমরা সংসদে প্রয়োজনে বিরোধিতা করেছি, অনেক সময় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছি।

সাবেক আইনমন্ত্রী মতিন খসরু বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এসে পস্তাচ্ছে। আশা করি এবার আসবে। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসার কোনো পথ নেই। নো খালেদা জিয়া নো ইলেকশন- এই ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। তারা ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন। তারা না এলে নির্বাচন হবে না-এটা কোনো কথা হতে পারে না। বিএনপির সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাকর্মী নির্বাচনে আসতে চাইছে।