এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৩৫,০০০ টাকা
বাঁচার জন্য খাওয়া, নাকি খাওয়ার জন্য বাঁচা? এ নিয়ে অনেক তর্ক হতে পারে। তবে খাওয়ার জন্য অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি সব জাতির মানুষের মধ্যে কমবেশী দেখা গেলেও অদ্ভুত এবং বিচিত্র খাবারের জন্য জাপানের জুড়ি মেলা ভার। যেসব খাবারের জাপান সুপ্রসিদ্ধ, তার মধ্যে অন্যতম হল জাপানিজ কোবে বিফ বা ‘কোবে’ গরুর মাংস।
‘কোবে’ গরুর মাংস পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান গরুর মাংস, যার প্রতি কেজির মূল্য ২৪০০০ টাকা থেকে ৩৫০০০ টাকা। শুনে নিশ্চয় অবিশ্বাস্য লাগছে। কিন্তু অবিশ্বাস্য লাগার কিছু নেই। কারন এই কোবে গরুর মাংস শুধুমাত্র জাপানেই তৈরী হয়, জাপানে তৈরী হয় বললেও ভুল হবে। এর মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য জাপানে আইন আছে কোবে গরু জাপানের হোয়েগো অঞ্চল ব্যাতীত অন্য কোন অঞ্চল তৈরী করতে পারবে না।
এমনকি ‘কোবে’ শব্দটির স্বত্বাধিকারীও কেনা জাপানের। তবে পরিতাপের বিষয় হল, ‘কোবে’ শব্দটার উপর জাপানের এই কপিরাইট আমেরিকা মানে না। যার ফলে আমেরিকাতে কোবে বীফ পাওয়া যায়, যা দামে কিছুটা কম সাধারণ প্রতি কেজি ২০০ ডলার বা ১৬০০০ টাকার মত। ১৯৭৬ সালে আমেরিকা জাপান থেকে চারটি টাজিমা জাতের গরু নিয়ে যায়, যা থেকেই জাপানিজরা কোবে বীফ বানায়, সেই চারটি গরু দিয়েই আমেরিকা নিজস্ব ভাবে কোবে বীফের উৎপাদন শুরু করে,যা আমেরিকান জাপানিজ কোবে বীফ নামে পরিচিতি লাভ করে।
এতক্ষণে মনে নিশ্চয় প্রশ্ন জাগছে কি আছে কোবে বীফে, যে গরুর মাংস নিয়ে এতো চাহিদা। কোবে গরুর মাংস তার স্বাদ, গন্ধ অনন্য সাধারণ, বিশেষ করে মাংসের মধ্যে চর্বির পরিমানের উপরই কোবে বীফের মান নির্ণয় হয়। কোবে গরুর মাংসে কোন ক্ষতিকারক কোষ্টেরল থাকে না, থাকে না কোন ক্ষতিকারক স্যাচুরেটেড ফ্যাট। চর্বি হিসাবে থাকে মোনো নো স্যাচুরেটেড ফ্যাট , ওমেডা-৩ এবং ওমেডা-৬। এর মাংস নরম তুলতুলে হয়। সাধারণত স্টেক হিসাবে খাওয়া হয় এই গরুর মাংস।
কিভাবে বানানো হয় কোবে গরুর মাংস তা শুনলে আপনি কিছুটা ভড়কে যেতে পারেন, শুধুমাত্র জাপানের হোয়েগা অঞ্চলের তাজিমা জাতের গরু দিয়েই বানানো হবে কোবে বীফ। তবে তাজিমা জাতের কালো গরুই শুধু ব্যবহৃত হবে এই মাংস বানানো, অন্য কোন রংয়ের হলে হবে না । আর শুনলে অবাক হবেন, প্রতিদিন আটজন রাখাল দৈনিক আট ঘন্টা এই গরুদের সারাদেহে ম্যাসাজ করে গরুর মাংস নরম রাখার জন্য এবং চর্বির পরিমান কম রাখার জন্য। এই ম্যাসাজের উপরই অনেকখানি নির্ভর করে কোবে গরুর মাংসের মান, যা সরাসরি জাপান সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আর স্বাভাবিক গরুর খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন এই গরুগুলোকে খাওয়ানো এক লিটার করে এ্যালকোহল বা বিয়ার, যা তাদের দেহে ফ্যাট তৈরী করে, এবং অতিরিক্ত ম্যাসাজের ফলে সেই ফ্যাট মাংসকে নরম করতে সাহায্য করে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন