এক দু’কেজি বাদাম বিক্রি করেই জীবনটা চলে মুক্তার আলীর!

মুক্তার আলী (৫০)। জীবনটাই চলে গেলো বাদাম বিক্রি করে। রাজগঞ্জ হাইস্কুল, রাজগঞ্জ প্রাইমারী স্কুল, বালিকা বিদ্যালয়, কেজিস্কুল গেটে, আবার বিকেলে রাজগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বাদামের ঝুঁড়ি কাঁধে ঝুঁলিয়ে বাদাম বিক্রি করেন মুক্তার আলী। মুক্তার আলী রাজগঞ্জের এক পরিচিত মুখ। চরম অসহায় দুর্দিনগ্রস্থ তিনি। অভাব তাকে ছাড়ে না। অভাবের সাথেই মুক্তার আলীর জীবন। বাদাম বিক্রি করে সংসার চলে না। তারপরেও বাদাম বিক্রি ছাড়েনি মুক্তার। কারণ একটু প্রতিবন্ধীও আছেন তিনি। তাই অন্য কোনো কাজও করতে পারেন না। গায়ে তেমন জোর নেই। বাদাম বিক্রি করে আর ঝিঁমোই। সব সময় যেনো ক্লান্ত মুক্তার।

শনিবার (১৪ মে-২০২২) দুপুর ১২টার দিকে রাজগঞ্জ হাইস্কুল গেটের সামনে বাদামেন ঝুড়ি সামনে নিয়ে বসে আছে মুক্তার। কাছে গিয়ে দেখি বসে বসে ঝিঁমোচ্ছে। ভাই ভাই করে ডাক দিতেই চোখ মেলে। বললাম ১০টাকার বাদাম দেন। তারপর বিভিন্ন কথা হয় তার সাথে। বললাম, কতো বছর বাদাম বিক্রি করেন। তিনি বললেন, অনেক বছর বছর। পাশ থেকে তরিকুল ইসলাম নামের একজন বললেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, রাজগঞ্জ প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম তখন দেখেছি মুক্তার ভাই বাদাম বিক্রি করতো। তখনো যেরাম দেখতাম, এখনো সেরকমি দেখি মুক্তার ভাইকে। জিজ্ঞাসা করলাম আজ কতো টাকার বাদাম বিক্রি করেছেন। তিনি বললেন বেচা হচ্ছে না। ৩ কেজি বাদাম নিয়ে আইছি। এখানো আধা কেজিও বিক্রি করতে পারিরি।

তিনি বললেন, ১২৫ টাকা কেজি কাঁচা বাদাম কিনেছি। বাদামের দাম আগের থেকে অনেক বেশি। সারাদিন কতো টাকা আয় হয় জানতে চাইলে তিনি বলতে চাচ্ছিলেন না। এক পর্যায় বলেই ফেললেন। বললেন, শথকানি টাকা। মুক্তার আলী ২ কন্যা সন্তানের পিতা। ২ কন্যাকেই বিয়ে দিয়েছেন। থাকে তার বাড়িতেই। কিন্তু আলাদা সংসার।

জিজ্ঞাসাই মুক্তার আরও বলেন, মাঠে জমি জয়াগা কিচ্ছু নেই। প্রতিদিনের চাল প্রতিদিন কিনতে হয়। এখন যে জিনিসপত্রের দাম! মাছ, গোসের বাজারে যাওয়া পড়ে না। কুরবানির ঈদে গোস খায়। এতেই চলে। একথাও বললেন তিনি। বললেন, চাল, তরকারি আর একটু পাময়েল তেল কিনতেই টাকা শেষ। কি করবো। এসময় মুক্তার আলীর চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তবুও যেনো কোনো চিন্তার ভাঝ নেই কপালে। কথাগুলো বলছেন আর ঝিঁমোচ্ছেন তিনি।

মুক্তার আলী বললেন, এই ঈদের সময় আমার বৌ কাউন্সিলি গিলো চাল আনতি। তা দিনি। আমার নামে কোনো কার্ডও নেই। কার্ড করতি টাকা লাগে। এজন্যি আমার কার্ড হয়নি। মুক্তার আলীর পাশে বসা সেই তরিকুল ইসলাম বললেন, মুক্তার আলী খুব অভাবি একজন মানুষ। দিন আনা দিন খাওয়া এই মুক্তার আলীর জীবনটাই চলে গেলো ১/২ কেজি বাদাম বিক্রি করে।

তিনি বলেন, আমার জানা এবং দেখা মতে, মুক্তার কোনো দিন নতুন পোষাক কিনতে পারেনি। আমার মনে হয়, মুক্তার আলীর কোনো স্বপ্ন নেই। আসলে স্বপ্ন থাকবেই বা কি করে। মুক্তার আলীরতো কোনো অর্থ সম্পদ নেই। মুক্তার অভাবি, গরীব, দুস্থ, অসহায়, হতদরিদ্র এসব তালিকার একজন মানুষ। এই মুক্তার আলী যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা।