এটি দুর্নীতিবান্ধব বাজেট : টিআইবি

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে দুর্নীতিবান্ধব বাজেট বলে আখ্যায়িত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। করদাতাদের ওপর বৈষম্যমূলক করারোপ, কালো টাকার বৈধতা দিতে অসাংবিধানিক সুযোগ, মেগা প্রকল্পে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ হ্রাসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায়, এবারের প্রস্তাবিত বাজেট দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করবে বলে দাবি তাদের।
মঙ্গলবার (৬ জুন) টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। একইসঙ্গে বাজেট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রস্তাবিত বাজেটের এসব অবস্থান পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ব্যাংকিং খাতে চলমান দুর্নীতি ও অর্থ পাচার বন্ধে বাজেটে কোনও প্রস্তাব নেই উল্লেখ করে বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একদিকে ব্যাংকিং খাতে চলমান দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার বন্ধে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনও পদক্ষেপের প্রস্তাব তো করাই হয়নি, উল্টো দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকিং খাতে মূলধন বাবদ কর আদায়ের মাধ্যমে দুই হাজার কোটি টাকা অর্থায়নের প্রস্তাব করে জনগণের অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতিকেই প্রতিপালন ও উৎসাহিত করা হলো। ’

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকিং খাতে অর্থায়নকে অশুভ উদ্যোগ বলে অভিহিত করেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের সঞ্চয়ের ওপর অতিরিক্ত করারোপ করে তাদের জন্য বৈধ পথে সামান্যতম বাড়তি আয়ের পথও রুদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিত্তশালী ও ধনীদের তুলনায় মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অতিরিক্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা চাপানো হয়েছে। যা একদিকে যেমন বৈষম্যমূলক,অন্যদিকে যেকোনও মাপকাঠিতেই রাজস্ব বাড়ানোর টেকসই উপায় হতে পারে না।’

বিবৃতিতে এধরনের দুর্নীতি সহায়ক, অবিবেচনা প্রসূত ও অপরিণামদর্শী পথ থেকে সরে এসে শুদ্ধাচার ও জনবান্ধব রাজস্বনীতি অবলম্বন ও তা বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে মূসকের বোঝা সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে উল্লেখ করে বলা হয়, মূসকের চূড়ান্ত বোঝা মধ্যবিত্ত, নিম্ন আয়ের বা সাধারণ জনগণের ওপর আরোপিত হতে বাধ্য। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি যুক্ত হয়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠায় অস্থিতিশীলতা ও ক্ষোভ বাড়বে।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির মুখোমুখি জনগণের জন্য গঠিত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ)-এর জন্য ২০১৭-১৮ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মাত্র ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে টিআইবি।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ)-এর জন্য ২০১৭-১৮ বছরের বাজেটে মাত্র ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা হওয়া উচিত।’

এবারের বাজেটেও যেভাবে কালো টাকাকে বৈধতা প্রদানের অসাংবিধানিক, অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে, তার জোর প্রতিবাদ জানায় টিআইবি।এ সুযোগ বন্ধ করাসহ উল্লিখিত বৈষম্যমূলক প্রস্তাবনাগুলো পুনর্বিবেচনা করে সরকার জনগণের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট হবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।