এত দুর্বল চিত্তের হলে চলবেন কী করে, মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী

নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে দল ও মন্ত্রিসভায় ‘দুর্বলচিত্তের’ সদস্যদেরকে এক হাত নিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘এত দুর্বল চিত্তের লোক হলে চলবেন কী করে?’

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছাত্ররা আন্দোলনে দেশ স্থবির করে দিয়েছিল বলে এক মন্ত্রীর কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর দিন নিরাপদ সড়কের দাবিতে ওই সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় ছাত্ররা। এরপর তা সারা শহরে ছড়ায়।

আর রাজধানীতে শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে নেমে আসার পর দেশের বিভিন্ন এলাকাতেও একই চিত্র দেখা দেয়। এক পর্যায়ে যা চলাচলে স্থবিরতা নেমে আসে। সরকারের বারবার আহ্বান সত্ত্বেও ছাত্ররা যখন রাস্তা থেকে নামছিলেই না, তখন মতলবি মহলের সুযোগ নেয়ার সতর্কতা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

এর মধ্যে রাস্তায় নামতে জনৈক নওমি নামে যুবককে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পরামর্শের অডিও রেকর্ড প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। আবার স্কুল ড্রেস বিক্রি বৃদ্ধি ও ব্যাপক হারে লেমিনেডেট আইডি কার্ড তৈরির প্রবণতার খবর আসে। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে গিয়ে অছাত্ররাও সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছে।

আবার ৪ আগস্ট ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলার চেষ্টা হয়েছে সেখানে চার ছাত্রকে হত্যা ও চার জনকে ধর্ষণের গুজব ছড়িয়ে। এরপর ছাত্র এবং তাদের সঙ্গে আসা ছেলেদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

এই পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মন্ত্রিসভায় একজন মন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্ররা তো পুরা দেশ অচল করে দিয়েছিল।’ আর এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন কীভাবে করতে হয় তা কি ছাত্ররা দেখাতে পেরেছে? ছাত্রদের আন্দোলনে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। ভয়ের কিছু নেই। এরা কতদূর যেতে পারে সেটাও আমার জানা ছিল। এত দুর্বল চিত্তের লোক আমার সঙ্গে থাকার দরকার নেই, না থাকাই ভালো।’

‘প্রকৃত আন্দোলন মানে রোদে পুড়বে, বৃষ্টিতে ভিজবে, এমন তো কিছুই হয়নি- উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ফেসবুক সমস্যা করেছে-একজন মন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলেই ফেসবুক একটা সমস্যাই। অনেক খবরাখবর হয়তো নিতে পারেনি।’

বৈঠেকে সড়ক পরিবহন আইন এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এ সময় একজন মন্ত্রী দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য চালকের সর্বোচ্চ সাজা সাত বছরের কারাদণ্ড রাখার প্রস্তাব করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা (আইন মন্ত্রণালয়) যখন একটা সুপারিশ করে পাঠিয়েছে তখন পাঁচ বছরই থাকুক। অনেক কিছু ঘেঁটেই তারা আইনটি করেছে।’

খসড়া আইনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা বলা নেই। আর এই বিধানটি সংযোজনের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।