করোনারোধী স্প্রে আবিষ্কার করে চমকে দিলেন বাংলাদেশি সাদিয়া
মাত্র ২৪ বছর বয়সে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী স্প্রে আবিষ্কার করে অবাক করে দিয়েছেন অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীকে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী সাদিয়া খানমের এই উদ্ভাবনকে বড় আবিষ্কার বলে গণ্য করা হচ্ছে। প্রায় দেড় বছর ধরে গবেষণার পর ভলটিক নামের এই জীবাণুনাশক তৈরি করেছেন সাদিয়া।
এরই মধ্যে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএসসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এটিকে অনুমোদন দিয়েছে। জানা গেছে, যেকোনো বস্তুর সারফেসে ভলটিক স্প্রে করা হলে সেটি দুই সপ্তাহের জন্য জীবাণুমুক্ত থাকবে। মানুষের চামড়া থেকে শুরু করে লোহার পাত, সবকিছুতে লেগে থাকা জীবাণু ধ্বংস করতে সক্ষম এই স্প্রে।
রেস্তোরাঁয় গবেষণা ও পরীক্ষা : ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর সাদিয়া খানম তার পিএইচডি গবেষণা স্থগিত রেখে উত্তর পশ্চিম ইংল্যান্ডের চেশায়ারে তার বাবার রেস্তোরাঁয় এই ভাইরাসটি নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা শুরু করেন।
বাবার রেস্তোরাঁতেও ভলটিক স্প্রে ব্যবহার করে তিনি আংশিক গবেষণা চালিয়েছেন। এই রেস্তোরাঁকে তিনি ব্যবহার করেছেন গবেষণার একটি কেস স্টাডি হিসেবে। সেখানে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটান এবং রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন জিনিসের সারফেসের ওপর তার উদ্ভাবিত জীবাণুনাশক স্প্রে করে সফল হন।
সাদিয়া খানম বলেন, মহামারির কারণে আমার বাবাসহ আশেপাশে যারা আছেন ব্যবসা করতে অসুবিধা হচ্ছিলো। যেহেতু আমি একজন বিজ্ঞানী তাই এরকম পরিস্থিতিতে কিছু একটা করা আমার দায়িত্ব। আমি এর একটা সমাধান খুঁজে বের করতে চেয়েছি। আমার মনে হলো যদি একটা জীবাণুনাশক বের করতে পারি তাহলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যাবে।
গবেষণায় এই ভাইরাসটিকে ধ্বংস করার জন্য তিনি নানা রকমের সমীকরণের সন্ধান করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এরকম একটি কার্যকরী ইকুয়েশন উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। তিনি এর নাম দিয়েছেন ভলটিক। বিশেষ একটি মেশিন দিয়ে এই জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হয়।
ভলটিক আবিষ্কার ও ব্যবহার : ভলটিক স্প্রে খুবই উচ্চ-চাপের মধ্যে কাজ করে। নানা ধরনের প্রয়োগের ফলে এর বিভিন্ন রকমের উপকারিতা আছে। এটি চামড়া থেকে শুরু করে কাঠ, লোহা থেকে কাপড়- সব ধরনের সারফেসের ওপর কাজ করে বলে গবেষণায় তিনি দেখতে পেয়েছেন।
বিজ্ঞানী সাদিয়া খানম দাবি করছেন তার আবিষ্কৃত ভলটিক সব ধরনের করোনাভাইরাস ধ্বংস করতে সক্ষম। তিনি বলেন, ভলটিক করোনার সব ধরনের ভ্যারিয়্যান্টের বিরুদ্ধে কাজ করে। কারণ আমি এই ভাইরাসের আসল স্ট্রেইন নিয়ে কাজ করেছি।
সাদিয়া খানম বলেন, এই জীবাণুনাশ প্রক্রিয়ার একটি অংশ হচ্ছে- কোনো জীবাণু যদি কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসে তখন তাকে ধ্বংস করে ফেলা। অর্থাৎ কোনো কিছুর ওপর যদি ভাইরাস থাকে, এর সাহায্যে তাকে সঙ্গে সঙ্গেই মেরে ফেলা সম্ভব।
টানা দুই সপ্তাহের জন্য যেকোনো জীবাণু থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন সাদিয়া। এসব জীবাণুর মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, করোনাভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস, এইচ আই ভি -বি ইত্যাদি।
ব্রিটেনে জীবাণুনাশক সংক্রান্ত বিভিন্ন দফতর ও কর্তৃপক্ষও ভলটিক স্প্রের ওপর ট্রায়াল সম্পন্ন করে এটিকে অনুমোদন দিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এটি ব্যবহারের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। হাসপাতাল, কেয়ার হোম, হোটেল রেস্তোরাঁ, বিমান ও পরিবহন খাতে এই স্প্রে ব্যবহারের সম্ভাবনা প্রবল।
স্বপ্ন ছুঁতে চান সাদিয়া : শৈশব থেকেই সাদিয়া খানমের স্বপ্ন ছিল তিনি বিজ্ঞানী হবেন। সেই পথেই হেঁটেছেন তিনি। স্যালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বায়োমেডিকেল সায়েন্স এবং চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনোমিক মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
ব্রিটেনে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার আগে আলঝাইমার্স রোগের ওপর পিএইচডি গবেষণা শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাদিয়া। এর নেপথ্যেও কারণ আছে। তার দাদা আলঝাইমার্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি স্বপ্ন দেখেন যে একদিন তিনি এই রোগের ওষুধ আবিষ্কার করবেন।
সাদিয়া বলেন, আমার বয়স যখন ১৪, তখন থেকেই আমি স্বপ্ন দেখি যে আমি আলঝাইমার্স রোগের ওষুধ আবিষ্কার করবো। কারণ এখনও পর্যন্ত এর কোনো চিকিৎসা বের হয়নি। আমি আমার দাদাসহ সবাইকে সাহায্য করতে চাই।
ভলটিক নিয়ে পুরো কাজ শেষে আলঝেইমার্স রোগের গবেষণায় ফিরে যেতে চান সাদিয়া। তিনি বিশ্বাস করেন তার স্বপ্ন একদিন পূরণ হবে। তথ্যসূত্র: বিবিসি
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন