করোনার প্রভাবে ধস নেমেছে কুমিল্লার রপ্তানি পণ্য টুপি শিল্পে
১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক কিরাত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধকারী কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার হাফেজ ইয়াকুব আলী। ধর্ম ভিত্তিক জীবিকা নয়; স্বপ্ন দেখতেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হবার। স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছোট্ট পরিসরে চালু করেন ‘নাবিলা রহমান ক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল ’ নামে একটি টুপি কারখানা। মাত্র ৩টি মেশিন নিয়ে যাত্রা করা প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছরের ব্যাবধানেই পরিণত হয় লিমিটেড কোম্পানীতে। সৃষ্টি হয় প্রায় ৫শ’ লোকের কর্মসংস্থান। ব্যাবসা শুরু হয় আন্তর্জাতিক বাজারে। এই টুপি কারখানা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ৭টি দেশে টুপি রপ্তানী হয়ে আসছে সুনামের সাথে।
মুরাদনগরের নাবিলা রহমান ক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল এর কর্মকর্তা মোঃ নাজিম উদ্দিন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, প্রতিমাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ম‚ল্যের ৫০ হাজার পিছ টুপি রপতানী করে বৈদেশিক ম‚দ্রা আয়ে বিশেষ ভুমিকা রেখে আসছিলো তাদের প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু সবকিছুই যেন এলোমেলো করে দিয়েছে সর্বগ্রাসী করোনা। হুমকীর মুখে পড়েছে শতভাগ রপ্তানীমুখী এ টুপিশিল্প কারখানাটি।
শুধু মুরাদনগর নয় জেলার হোমনায়ও গড়ে উঠেছে বেশকিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারী টুপি কারখানা। হোমনার উত্তর পাড়া, আলীপুর, চুনারচর সহ ৬টি গ্রামে গেলো এক দশকেরও বেশি সময়ে গড়ে উঠেছে ৩০ টিরও বেশি কারখানা। লেইস, আঁড়ি, ওমানী ও পাকিস্তানি এমন বাহারি নামের উন্নত মানের টুপি তৈরী হয় এখন থেকে।
একসময় কুমিলার হোমনায় তৈরী করা টুপিও দেশের চাহিদা মিটিয়ে যেতো দেশের বাইরে। বিশেষ করে মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে।
বহু বছর ধরে ঈদে নতুন টুপির যোগান দিয়ে আসছিলো হোমনার টুপি কারখানাগুলো। ঈদ এলেই এসব কারখানার প্রায় ৩শত কারিগর রাতদিন ব্যাস্ত সময় কাটাতেন। মহামারী করোনার প্রভাবে দেশেরে অন্যান্য শিল্প কারখানার মতোই স্থবির পড়েছে কুমিলার রপ্তানী মুখি প্রতিষ্ঠান টুপি শিল্প। ঈদকে সামনে রেখেও কারখানাগুলোতে নেই আগের মতো ব্যস্ততা। করেনার আগ্রাসনে রপ্তানী বন্ধ হয়ে এখন এই টুপি শিল্পটিই বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
কোনোমতে টিকে আছে জেলার মুরাদনগর ও হোমনা উপজেলার টুপি কারখানাগুলো। কষ্টে সময় পার করছেন কারিগররা। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের টুপি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা। তবে, সরকারের সহযোগিতা পেলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
করোনায় স্থবীর হয়ে পড়া রপ্তানীমুখী কুমিলার এই টুপি শিল্পে সরকারের সহযোগিতা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে এবং আবারও রপ্তানী খাতে বিশেষ ভ‚মিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যবসায়ীদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইলেন কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি, এফবিসিসিআই এর পরিচালক মাসুদ পারভেজ খান ইমরান।
ক্ষতিগ্রস্থ শিল্প প্রতিষ্ঠানের যে কেউ যে কোনো প্রকার সহযোহিতা চাইলে পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন ব্যাবসায়ী সংগঠনের এই নেতা।
এদিকে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প কারখানার ব্যবসায়ীরা সরকারী প্রণোদনা চাইলে তাদেরকে অগ্রধিকার দিয়ে সব ধরনের সুবিধা দেয়ার কথা জানান মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত টুপি কারখানার শ্রমিকরা যেকোনো সহায়তা চাইলে, কিংবা উপজেলা প্রশাসন তালিকা প্রণয়ন করলে তাদের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হবে
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন