কলারোয়ায় ৮ মাস বন্ধ ব্যস্ততম বেত্রবতী সেতু নির্মাণকাজ, ভাঙা সেতু দিয়ে ঝুঁকিতে পারাপার

সাতক্ষীরার কলারোয়ার জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম বেত্রবতী সেতু নির্মাণকাজ কিছুটা শুরু হয়ে বন্ধ হয়ে রয়েছে প্রায় ৮ মাস ধরে। এটির নির্মাণ কাজ শুরু করে ফেলে রাখা হয়েছিলো দীর্ঘদিন। আবার গত বছরের আগস্টে নদীর দুই তীরের জমি অধিগ্রহণ, সীমান্ত চিহ্নিতকরণ সম্পন্ন করার পাশাপাশি ভবন উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষ হওয়ায় সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে সকল বাধা দূর হয়।

কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পর গত ৮ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে এটির সকল কাজ। নির্মাণ কাজের জন্য ভেঙে ফেলা জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে চলাচল করছে ভারী যানবাহন, পথচারীসহ সব ধরনের বাহন। সেতুর দক্ষিণ পাশে বসানো বেইলি ব্রিজের অবস্থাও নড়বড়ে। সেকারণে আংশিক ভাঙা সেতুতে যানবাহনের চাপ কমছে না এতটুকু।
সরেজমিনে ঘুরে এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করা গেছে।

বড় ধরনের যে কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষজন। বড় বাজেটের অত্যাধুনিক মডেলের এই সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে এ জনপদে যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।

জানা যায়, জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে প্রথমে সেতুর কাজ শুরু হয়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। গত বছরের আগস্টে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় বেত্রবতী সেতু সংলগ্ন জমি অধিগ্রহণে জমির দখল সীমানা নির্ধারণ করা হয়। কলারোয়া পৌরসভাধীন ঝিকরা ও মুরারীকাটি মৌজার আওতায় সেতুর অ্যাপ্রোস সড়ক নির্মাণে সরকারিভাবে প্রায় এক একর দশ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়। গত বছরের ২৩ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিকরণ কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কৃষ্ণা রায়ের নেতৃত্বে ভূমি অধিকরণকাজ সম্পন্ন হয়। জমির মালিকরাও সরকার নির্ধারিত অর্থও পেয়ে যান। অধিগৃহীত জমির ব্যবসায়িক স্থাপনাসহ সকল স্থাপনা সরিয়ে নেয়া হয়। সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব পাশের সকল স্থাপনা ভাঙাও হয়ে যায়।

উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নকে বেত্রবতী নদী দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। নদীর পশ্চিম অংশে কলারোয়া পৌরসভা, উপজেলা সদরসহ ৬টি ইউনিয়ন। অপরদিকে পৌরসভার একটি অংশসহ ৬টি ইউনিয়ন নদীর পূর্ব অংশে অবস্থিত। এছাড়া সাতক্ষীরার তালা উপজেলা ও যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর, ঝিকরগাছা, শার্শা উপজেলার মানুষ এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করেন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ছাড়াও সব ধরনের ভারী ও কম ভারী যানবাহন এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে। সেতুটি ভগ্নদশায় রূপ নেয়ায় যান চলাচল ভীষণ ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ২০২২ সালে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর অংশ হিসেবে বর্তমান সেতুর রেলিং এর দক্ষিণ অংশ ভেঙে ফেলা হয়। দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হয় একটি বেইলি ব্রিজ। তারপরে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় শুরু হওয়া কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৩ সালের আগস্টে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হওয়া, ভূমি মালিকগণের সরকার নির্ধারিত অর্থ প্রাপ্তি, সকল স্থাপনা অপসারণ করার মধ্য দিয়ে সেতু নির্মাণকাজের সকল বাধা দূরীভূত হয়। নতুন করে আশার আলো দেখা দেয় সেতু নির্মাণকাজের।

সব বাধা দূর হওয়া অবস্থায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনীহায় ফের বন্ধ হয়ে যায় সেতুটির নির্মাণকাজ। ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হতে নির্ধাধিত সময়ের চেয়ে ১২০ দিনের মতো বেশি সময় লাগায় সেতু নির্মাণকাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারবে না বলে কাজ শুরু করেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা বন্ধ করে দেয়।
এছাড়া নির্মাণকাজের দরপত্রের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বর্তমান বাজারে নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বেশি হওয়ার কথা বলে সেতু নির্মাণ কাজ বাতিল চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জানায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। নির্মাণ কাজের জন্য আনা সকল মালাপত্র নদীর তীর থেকে তারা সরিয়েও নেয়। তারা এই নির্মাণকাজ চালিয়ে যেতে অফিসিয়ালি অপারগতা প্রকাশ করে।
তবে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর আশা করছে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজটি আবারও শুরু হতে পারে। যা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজ জানান।