কাঁকড়াদের রক্ত বের করে নিচ্ছে মানুষ! কেন?

যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর উপসাগরীয় অঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় বিশেষ প্রজাতির এক কাঁকড়ার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

তাদের এ বিলুপ্তির পেছনে দায়ী তাদেরই দেহের নীল রক্ত।

এই নীল রক্ত সংরক্ষণে কাঁকড়াদের ধরে রক্ত বের করে নিচ্ছেন আমেরিকানরা।

অশ্বক্ষুরের ন্যায় দেখতে উপবৃত্তাকার এ কাঁকড়াকে জীবন্ত জীবাশ্ম বলেন প্রাণী বিজ্ঞানীরা।

তাদের জীববৈচিত্র্যের বিস্ময় বলছেন তারা।

প্রাণী বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ডাইনোসর যুগেরও আগে প্রাণী এ কাঁকড়া এসেছে। প্রায় ৪৪ কোটি ৫০ লাখ বছর আগেও পৃথিবীতে এদের অস্তিত্ব ছিল।

রক্ত সংরক্ষণের উদ্দেশে এমন প্রজাতির কাঁকড়ার অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন আমেরিকানরা।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনসারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) জানিয়েছে, আগামী ৪০ বছরে আমেরিকায় এ কাঁকড়ার সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাবে।

কী কারণে এ প্রজাতির কাঁকড়াদের রক্ত চুষে নিচ্ছেন আমেরিকানরা?

কারণ এদের নীল রক্তের মূল্য অনেক। এই অশ্বক্ষুরাকৃতি কাঁকড়ার রক্তের দাম লিটারপ্রতি প্রায় ১১ লাখ টাকা!

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এদের রক্তের গুরুত্ব অপরিসীম। এদের রক্ত যে কোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও বিষাক্ত পদার্থ নিমিষেই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এদের রক্তে আছে অ্যামিবোসাইট।

এই অ্যামিবোসাইটে মাত্র এক ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। যেখানে স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে সময় লাগে ৪৮ ঘণ্টা।

কীভাবে এ অ্যামিবোসাইট তৈরি হয় তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বা ভ্যাকসিনেও ব্যাকটিরিয়ার উপস্থিতি পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয় এই অ্যামিবোসাইট।

এদের রক্তের রঙ নীল কেন?

বিজ্ঞানীরা জানান, মেরুদণ্ডী প্রাণীরা সাধারণত হিমোগ্লোবিনে লোহার উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করে থাকে। কিন্তু এই কাঁকড়াদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি অন্যরকম।

এরা হিমোসায়ানিনের সাহায্যে অক্সিজেন পরিবহন করে। এতে তামার উপস্থিতির কারণে রক্তের রঙ নীল হয়।

তবে আমেরিকার প্রাণী বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন অন্য তথ্য। তারা বলছেন, এ কাঁকড়াগুলো নিজেরাই নিজেদের রক্ত দেয়।

উল্লেখ্য, আমেরিকার সমুদ্রতীর থেকে প্রতি বছর প্রায় ছয় লাখ কাঁকড়া ধরা হয়। এর মধ্যে তাদের থেকে ৩০ শতাংশ রক্ত নেয়া হয়।

তবে সম্প্রতি এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ বেশ কয়েকজন প্রাণী বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, সব নয়, ১০-২০ শতাংশ কাঁকড়া রক্ত দিয়ে মারা যায়।

ইতিমধ্যে কাঁকড়া থেকে এভাবে রক্ত নেয়ার বিষয়কে আইইউসিএন ‘সমালোচনার যোগ্য’ ঘোষণা করে তাদের ‘রেড লিস্ট’-এ রেখেছে।

শুরু হয়েছে এই জলজ প্রজাতির সংরক্ষণ।