কান ধরানো আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
ত্রাণ পেয়েও না পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করায় বন্যার্ত এক দিনমজুরকে প্রকাশ্যে কান ধরে ক্ষমা চায়তে বাধ্য করেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। পরে তার কান ধরে মাফ চাওয়ার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় রোববার রাতে আবদুল বাছিত ওরফে বাবুল নামে ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে বাবুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় রোববার রাতে মোগলাবাজার থানা পুলিশ দিনমজুর লুৎফুর রহমান ওরফে লকুস মিয়া ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল বাছিত ওরফে বাবুলকে থানায় ডেকে পাঠায়। পুলিশ উভয়ের বক্তব্য শোনার পর কান ধরে টান দেওয়া ব্যক্তি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল বাছিত ওরফে বাবুলকে আটক করে। পরে লুৎফুর রহমান ওরফে লকুস মিয়া বাদী হয়ে বাবুলকে আসামি করে মামলা (নম্বর ৮) করেন।
দিনমজুর লুৎফুর রহমান ওরফে লকুস মিয়া দাউদপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইনাত আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্যাকবলিত এলাকাবাসীদের নিয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদে একটি সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ওই সমাবেশে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
ওই দিন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিককে লুৎফুর রহমান ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ করেন। এ কারণে ওয়ার্ড সদস্যসহ স্থানীয় লোকজন সুধী সমাবেশে লুৎফুরকে হাজির করেন। পরে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের ত্রাণ নেওয়ার তালিকায় তার নাম আছে। এ নিয়ে সমাবেশে লুৎফুরকে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয়।
একপর্যায়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল বাছিত ওরফে বাবুল তার কান টেনে ধরেন। এ সময় লুৎফুর হাত জোড় করে সবার সামনে ক্ষমা চান।
লুৎফুরের কান ধরার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন দাউদপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি এইচ এম খলিল।
সোমবার যোগাযোগ করা হলে খলিল বলেন, ছবিটি আসলে ভুল বার্তা দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। আমাদের সামনে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। ত্রাণ পেয়েও ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ শুনে সমাবেশে উপস্থিত সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তখন এ পরিস্থিতিতে লুৎফুরকে তার আত্মীয়রা সমাবেশে হাজির করেন। লুৎফুর ও তার পক্ষে চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল হাত জোড় করে মাফ চান। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
লুৎফুরের কান টেনে ধরার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বাবুল জানিয়ে ওসি খায়রুল ফজল জানান, ওই দিন সমাবেশটা ছিল সর্বদলীয়। ইউনিয়নবাসীর আয়োজনে সমাবেশ হয়েছে। ত্রাণ পেয়েও না পাওয়ার কথা মিডিয়াতে বলায় মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। ঘটনাটা ছোট হলেও মিডিয়ায় আসায় বিষয়টি বড় হয়ে গেছে।
তবে, ওই দিন সমাবেশে উপস্থিত সাতজন প্রত্যক্ষদর্শী ও তিনজন সংবাদকর্মী জানিয়েছেন, লুৎফুরকে জোর করে সমাবেশে হাজির করা হয়। টানাহেঁচড়া করে কান ধরাতে বাধ্য করা হয়। এ সময় উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুর রহমান ঘটনা প্রত্যক্ষ করে দ্রুত সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন।
ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুর রহমান দাবি করেন, তিনি এ ঘটনাটি পরে শুনেছেন। ঘটনা ঘটার আগে তিনি সেখান থেকে চলে গেছেন।
এদিকে গত বৃস্পতিবারের ওই সুধি সমাবেশে ত্রাণ নিয়ে লুৎফুর রহমানকে দিয়ে মিথ্যা বক্তব্য দিতে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ ইমাদ উদ্দিন নাসিরীকে ৯নম্বর ওয়ার্ডে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ.এম খলিল প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদে বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে সরকার বিরোধী অপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এক সুধী সমাবেশ গত ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে পরিষদের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ.এম খলিল এর সভাপতিত্বে ও ইউপি সচিব নজরুল ইসলামের পরিচালনায় সুধী সমাবেশে বক্তারা বলেন, দাউপুরের বন্যাকবলিত এলাকা ইনাত আলীপুর, মির্জানগর ও মানিকপুর গ্রামে সরকারি সব ত্রাণ ও অন্যান্য সহায়তা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে বিতরণ করা হয়েছে। অথচ একটি কু-চক্রী মহল সরকার ও ইউনিয়নের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। গত ২দিন আগে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে মির্জানগর গ্রামের সোনা মিয়ার পুত্র লুৎফুর রহমান সাক্ষাৎকারে সরকারি কোনো ত্রাণ পায়নি বলে বক্তব্য দেয়। অথচ সে ইউনিয়নের ভিজিএফ তালিকায় ৮৯৯ নম্বর সদস্য। ইতিমধ্যে সে বিগত ৩ মাস থেকে ভিজিএফ এর চালসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। এরপরও এ ধরনের সরকারবিরোধী বক্তব্য দুঃখজনক।
সুধি সমাবেশে লুৎফুর রহমান উপস্থিত হয়ে মিথ্যা বক্তব্য স্বীকার ও নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন কারো প্ররোচনায় পড়ে মিথ্যা বক্তব্য দেবে না বলে অঙ্গিকার করে।
সভায় লুৎফুর রহমানকে দিয়ে মিথ্যা বক্তব্য দিতে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আঞ্জুমানে আল ইসলাহ এর নেতা শাহ ইমাদ উদ্দিন নাসিরীকে ৯নম্বর ওয়ার্ডে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ইউপি সদস্য ইরা মিয়া।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন