কালীগঞ্জে মুজিব কেল্লা নির্মাণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

২ কোটি ৮ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয় মুজিব কেল্লা কাম আশ্রায়ন প্রকল্পে নিম্নমানের ইট, খোয়া, বালু, সিমেন্ট সহ নানা বিধ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ঠিকাদার নাজমুল আহসান এর বিরুদ্ধে।

কালীগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান সরদার গত মঙ্গলবার( ১৫ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার সময় প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।

লিখিত অভিযোগের সূত্র এবং মঙ্গলবার বেলা আনুমানিক ২ টার সময় সরোজমিনে প্রকল্পে স্থানে গেলে বন্ধ কাটি গ্রামের মুকুল, আব্দুল আলিম, মজনুর রহমান, আনারুল, আব্দুল গাফফার সহ একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বন্ধ কাটি গ্রামের গোয়াল ঘেঁষিয়া নদীর চরে বন্ধ কাটি মুজিব কেল্লা কাম আশ্রায়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

২কোটি ৮লক্ষ ৩৩হাজার ৩০২ টাকা এর প্রকল্প টি কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে এবং টেন্ডারে ফরিদপুর জেলার খন্দকার শাহীন আহমেদ কাজটি পায়। পরে কাজটি সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার ঠিকাদার বর্তমান সাতক্ষীরায় অবস্থানরত নাজমুল হাসান কাজটি কিনে নিয়ে নির্মাণ কাজ চালাতে থাকে।

উক্ত প্রকল্পের কাজটি দেখাশোনার জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, প্রকল্প সেক্রেটারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সদস্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এবং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা। প্রকল্পের কাজ শুরুতে নদীর চরে বালু ভরাট হতে ভবন নির্মাণের যাবতীয় ঢালাইয়ের কাজ নিম্নমানের খোয়া বালু এবং এর ব্যবহার করে নির্মাণ কাজে ঢালাই তে ব্যাপক অনিয়ম করতে থাকে।

ওই সময় কাজে অনিয়মের প্রতিবাদ করলে স্বয়ং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী নিজে যেয়ে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলার ভয় দেখিয়ে থানায় জিডি করে।

পরে এলাকাবাসী বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করে। প্রতিবাদের মুখে উক্ত প্রকল্পের দীর্ঘ ৫/৬মাস কাজ বন্ধ থাকার পর আবারো ছাদ ঢালাইয়ের জন্য খোয়া বানানোর কাজে ব্যবহৃত ৩/৪ নাম্বার ইট নিম্নমানের বালু, সিমেন্ট আনলে এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে আটকে যায়।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসীর বক্তব্যের সঙ্গে অতি নিম্নমানের আমা ইট স্তুপ করা দেখতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ভরাট কৃত চরের জায়গা ভেঙে নদীতে বিলীন হতে চলেছে। এ সময় প্রকল্প স্থানে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী রাশেদ সরকার নামে এক ব্যক্তিকে পাওয়া গেলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরে তার মুঠোফোনে কথা বললে ঠিকাদার নাজমুল হাসান ওপেন হার্ট সার্জারি করে হাসপাতালে শয্যাশায়ী আছেন বলে জানান। বিষয়টির আরো সত্যতা জানার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিরাজ হোসেন এর নিকট জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি ইট নিম্নমানের হওয়ায় গতকাল যেয়ে ফেরত নিয়ে যেতে বলেছি। বর্তমান কাজ বন্ধ আছে।

উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি নিম্নমানের কোন ইট বা কোন সামগ্রী দিয়ে কাজ হবে না, অনিয়ম করলে ঠিকাদারী লাইসেন্স বাতিল করা হবে। বিষয়টি আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন এ সংক্রান্ত বিষয় আমি কিছু জানিনা এবং প্রকল্প আমাদের সংশ্লিষ্ট না।

ঘটনার সত্যতা জানার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি সাঈদ মেহেদী এর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে বন্ধ পাওয়া যায়।