কিশোরগঞ্জে ইভটিজিংয়ের নালিশ করায় কৃষককে পিটিয়ে হত্যা, ৩টি ঘরে অগ্নিসংযোগ
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে স্কুল শিক্ষার্থীদের ইভটিজিং এর ঘটনায় অভিভাবকের কাছে নালিশ দেয়ায় ক্ষুব্ধ ইভটিজারগণ আবুবকর (৫৭) নামে এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত এলাকাবাসী হত্যাকারীদের তিনটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে উপজেলার রামদী ইউনিয়নের মুজরাই মধ্যপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবুবকর মুজরাই মধ্যপাড়া গ্রামের আব্দুস সোবহান এর ছেলে।
নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগে স্থানীয় বীর কাশিমনগর এফ.ইউ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. হাসিনা বেগম এক দূর্ঘটনায় আহত হলে ওই বিদ্যালয়ের দুই ছাত্র ও দুই ছাত্রী তাঁদের শিক্ষিকাকে দেখতে যায়।
এ সময় রাস্তায় ছাত্রীদের অশ্লীল ভাষায় কথাবার্তা বলে ইভটিজিং করে মুজরাই গ্রামের রবি মিয়ার ছেলে বাবুল ও আলমের ছেলে রিসাদ সহ কয়েকজন।
এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা বিষয়টি তাদের ম্যাডাম হাসিনা বেগমকে জানান। হাসিনা বেগম বিষয়টি আবুবকরের স্ত্রী আনিছা বেগমকে অবহিত করে আনিছা বেগম যেন বিষয়টি নিয়ে রিসাদ এর পিতা আলমের নিকট বিচার দেন।
আছিয়া বেগম বিষয়টি আলমকে অবহিত করলে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে আলমের ছেলে রিসাদ, সালামের ছেলে পারভেজ ও রবি মিয়ার ছেলে বাবুলসহ আরো কয়েকজন একত্রে কৃষক আবুবকরের বাড়িতে গিয়ে আনিছা বেগমকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে তাকে খুঁজতে থাকে।
এ সময় তাদের গালাগালির শব্দ পেয়ে আনিছার স্বামী কৃষক আবুবকর এশার নামাজ আদায় করে বাড়িতে এসে আনিছাকে খোঁজার কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা কৃষক আবুবকরকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে।
এ সময় আবুবকরের ভাতিজা সজীব বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে হামলাকারীরা। পরে অজ্ঞান অবস্থায় আবুবকরকে তার বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে রেখে চলে যায় তারা।
এ অবস্থায় স্থানীয়রা আবুবকরকে উদ্ধার করে বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে নিহতের হিতাকাঙ্ক্ষীরা উত্তেজিত হয়ে রিসাদ, বাবুল ও পারভেজদের বসতঘর ও জিনিসপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক মো. বায়েজিদ মিয়া (৩০), নিহতের বোন শামসুন্নাহার (৪৫), চাচাতো ভাই মো. জীবন মিয়া (৫৫) ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সেলিনা (৪৫) সহ এলাকাবাসী তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানান।
অপরদিকে রিসাদের বোন রকসী আক্তার (২৫) বলেন, আবুবকরের বাড়ির লোকজন তদের বাড়িতে এসে তিনটি বসতঘরে প্রবেশ করে প্রথমে নগদ টাকা স্বর্ণালংকার ও জিনিসপত্র লুটপাট করে। পরে এসব বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এতে তাদের অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা কৃষক আবুবকর নিহত হওয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, আবুবকরের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। লিখিত কোন অভিযোগ না পাওয়ায় এখনো কোন মামলা রুজু করা হয়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন