কুমিল্লায় মতিন সৈকতের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন; ২৭ বছর ধরে বিঘাপ্রতি দুই’শ টাকায় দিচ্ছেন সেচ সুবিধা
বোরো ধান উৎপাদনে সেচের বিকল্প নেই। বোরো ধানের আয়ুষ্কাল ৫ মাস। বাংলা সনের পৌষ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত সময় বোরো চাষের মৌসুম।
এ সময় স্বাভাবিকভাবেই খাল-নদী শুকিয়ে যায়। পানির স্তর নেমে যায় নিচে। পানিস্বল্পতা সেচে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। কিন্তু, বোরো চাষের জমিতে বেশির ভাগ সময় পানি সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। কুশি গজানো, গাছ সম্প্রসারণ এবং ভালো ফলনের জন্য সেচের পানি অপরিহার্য। দেশের যেকোনো জায়গায় বোরো চাষে কৃষককে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত সেচের খরচ দিতে হয়। অথচ এককালীন মৌসুমব্যাপী বিঘাপ্রতি মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে ১৫০ বিঘা জমিতে কৃষককে ২৭ বছর ধরে বোরো রোপণ থেকে পাকা ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত সেচ সুবিধা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর গ্রামের মতিন সৈকত।
জানা যায়, মতিন সৈকতের নিজ গ্রাম আদমপুর, পাশের পুটিয়া ও সিংগুলা গ্রামের মধ্যবর্তী ১৫০ বিঘা বোরো ধানের জমিতে বিঘাপ্রতি মৌসুমব্যাপী মাত্র ২০০ টাকায় সেচের পানি সরবরাহ করে কৃষককে ধান উৎপাদনে সহযোগিতা দিচ্ছেন। গত ২৭ বছরে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বহুগুণ বাড়লেও মতিন সৈকতের সেচের টাকার পরিমাণ কখনো বাড়েনি।
একসময় এসব জমিতে বোরো ধান ছাড়া কিছুই হতো না। বর্ষাকালে কচুরিপানা, ঘাস-আগাছা জমে আবর্জনায় পরিণত হতো। সেগুলো পরিষ্কার করতে অতিরিক্ত বিঘাপ্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লাগত। সংশ্লিষ্ট জমির মালিকদের নিয়ে সম্মিলিত উদ্যোগে গণশেয়ারের ভিত্তিত্তে ২০০০ সালে আদমপুর, পুটিয়া এবং সিংগুলা গ্রামের মধ্যবর্তী ২৫০ বিঘা জমিতে আপুসি মৎস্য প্রকল্প এবং আদমপুর, পুটিয়া, বিটমান গ্রামের মধ্যবর্তী ৪০০ বিঘা জমিতে আপুবি ও পুটিয়াতে ১০০ বিঘা জমিতে বিসমিল্লাহ মৎস্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন মতিন সৈকত। একই জমিতে শুকনো মৌসুমে প্রায় বিনামূল্যে বোরো ধানের আবাদ, অন্যদিকে বর্ষাকালে মাছ চাষ করে ধানের পাশাপাশি বিঘাপ্রতি ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে কৃষককে দিচ্ছেন তিনি। অত্র এলাকায় সেচের পানির মূল উৎস কালাডুমুর নদী। মতিন সৈকত ২০ বছর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে নদীটির ১১ কিলোমিটার পুনঃখননের ব্যবস্থা করেন। এতে করে দাউদকান্দি, মুরাদনগর, চান্দিনা এবং কচুয়া উপজেলার ৫০ হাজার বিঘা জমিতে প্রায় ১২ লাখ মণ বোরো ধান উৎপাদন সহজ হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তৃণমূল পর্যায়ে কৃষি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করছি। এরই অংশ হিসেবে আমি গত ২৭ বছর ধরে পুরো মৌসুম বিঘা প্রতি মাত্র ২০০ টাকায় সেচ সুবিধা দিয়ে আসছি। ইনশাল্লাহ্, সকলের সহযোগিতা, দোয়া ও ভালোবাসা পেলে ভবিষ্যতেও আমার এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বলেন, মতিন সৈকত উপজেলার কৃষকদের খুব আপনজন। সরকারের পাশাপাশি তৃণমূলে কৃষকের পাশে থেকে সব সময় সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। তিনি ২৭ বছর ধরে নামমাত্র ২০০ টাকায় বিঘাপ্রতি সেচের পানি সরবরাহ করে কৃষকদের সেবা দিচ্ছেন। তিনি কৃষকদের যেভাবে সংগঠিত করে সহযোগিতা করছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, মতিন সৈকতকে দাউদকান্দির কৃতি সন্তান হিসেবে রাষ্ট্রপতি অভিনন্দনপত্র দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে দুইবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রদান করেছেন। তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে ছয়বার চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। আমরা মতিন সৈকতকে নিয়ে গর্ববোধ করি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন