কুমিল্লা বিবির বাজার স্থলবন্দর: বাণিজ্যের সম্ভাবনাতেও মিলছেনা সুফল

কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিবির বাজার স্থলবন্দর। শহর থেকে বিবির বাজার শুল্ক স্টেশনে যেতে সময় লাগে আধা ঘণ্টা। রাজধানী ঢাকা থেকে এ শুল্ক স্টেশনের দূরত্ব ১১১ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম থেকে দূরত্ব ১৪৭ কিলোমিটার। আর ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার।

ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে আন্ত:বাণিজ্যের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ২৪টি পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে বন্দরটি দিয়ে।

সূত্রমতে, বিবির বাজার স্থলবন্দর হয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ৪২টি পণ্য আমদানির অনুমোদন রয়েছে।রপ্তানির অনুমোদন রয়েছে বাংলাদেশি সকল পণ্যের। তবে বন্দরটিতে আমদানি-রপ্তানি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিবির বাজার স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মাত্র আটটি পণ্য। বাকি ৩৪টি পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করেনি ভারত।
আর বাংলাদেশি সকল পণ্যের রপ্তানির সুযোগ থাকলেও এ পর্যন্ত ১৬টি পণ্য বিবির বাজার স্থলবন্দর হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। আমদানিকৃত পণ্যগুলো হলো পান, বেল, তেঁতুল, জিরা, আদা, আগরবাতি, চকোলেট ও ঝাড়ু।
আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যগুলো হলো সিমেন্ট, কয়লা, পাথর, সাবান, প্লাস্টিক ডোর, কিচেন র‌্যাক, পিভিসি পাইপ, গার্মেন্টস সামগ্রী, টাইলস, সিমেন্ট শিট, দড়ি, ইট ভাঙার মেশিন, বিস্কুট, সফট ড্রিংকস, টিন ও চিটাগুড়।

এগুলো ছাড়াও এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত ৬৬৫.৩২ মেট্রিক টন বেক্সিমকো এলপি গ্যাস ও ৭৪৩.১১মেট্রিক টন ওমেরা এলপি গ্যাস নিয়েছে ভারত। যার বাজার মূল্য প্রায় ১১ কোটি মার্কিন ডলার।

বিবির বাজার স্থলবন্দর সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের একটি সূত্র জানায়, বন্দরটি হয়ে বাংলাদেশের সকল পণ্য ভারতে রপ্তানির কথা উল্লেখ থাকলেও বাংলাদেশ সরকার মাত্র ২৪টি পণ্য আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতি নতুন করে সয়াবিন তেল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরার কোয়ারেন্টিন সেন্টারের লোকজন এই স্থলবন্দর পর্যবেক্ষণে আসলে নতুন করে বাংলাদেশ থেকে পোল্ট্রি ফিড রপ্তানির সুযোগ তৈরি হতে পারে।

সূত্র আরো জানায়, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত এখন বেশ শিথিলতা প্রদর্শন করছে। পূর্বের তুলনায় ভ্যাট প্রতিবন্ধকতা কমে এসেছে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আমদানি-রপ্তানিতে গতি আসবে।

কুমিল্লা বিবির বাজার স্থল ও শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২১সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করেছে এক লাখ ২১হাজার ৩৩৯ মেট্রিকটন পণ্য, যার বাজার মূল্য ৮৫ কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করেছে এক লাখ ২২ হাজার মেট্রিকটন পণ্য, যার বাজার মূল্য ৯৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। বিগত অর্থ-বছরের ১০ মাসের তুলনায় এ অর্থবছরের ১০ মাসে রপ্তানি মূল্য কম। প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১৫ শতাংশ।

২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে একহাজার ৪৪৩ মেট্রিকটন পণ্য, যার বাজার মূল্য ৬ কোটি ৬৬ লাখ ২০হাজার টাকা। দশ মাসে রাজস্ব আদায় হয় তিন কোটি ৭৮ লাখ ১৯ হাজার ৭০০ টাকা। ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে ২৯২ মেট্রিকটন পণ্য, যার বাজার মূল্য ৩৩ লাখ সাত হাজার টাকা। রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। বিগত অর্থবছরের ১০ মাসের তুলনায় এ অর্থবছরের ১০ মাসের আমদানি মূল্যে তুলনামূলক বেশি। তুলনামূলক কম ও কমদামি পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করায় সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। গত এক বছরে এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আমদানিকৃত পণ্যগুলোর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারত রপ্তানি বহুগুণ বৃদ্ধি করে। তবে তারা পণ্য তালিকায় পরিবর্তন আনেনি। যার কারণে শতকরা হিসেবে প্রবৃদ্ধি ১১৪৩ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেলেও রাজস্ব আদায়ে তাৎপর্যপূর্ণ কোনো পরিবর্তন আসেনি।

কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার (সদর দপ্তর) রিপন ছালাউদ্দিন জানান, এ বন্দরে যে শুল্ক আদায় হয়, তার চেয়ে বেশি শুল্ক আদায়ের প্রত্যাশা আমাদের রয়েছে। পুরো কমিশনারেটে মাসে প্রায় ৩০০ কোটির মতো ভ্যাট আদায় হয়, সেখানে ১১মাসে এ টাকা নগণ্য দেখায়। অপরদিকে বাংলাদেশ ভারতে ভারী পণ্য রপ্তানি করে থাকে। এ বন্দর হয়ে ভারতে বেশি রপ্তানি হয় সিমেন্ট ও কয়লা।

বিবির বাজার স্থলবন্দর সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামাল আহমেদ জানান, ‘করোনা ও বর্ষা, এ দুই কারণেই এখন আমদানি-রপ্তানি কমে এসেছে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে অক্টোবরে আমদানি-রপ্তানি দুটোতেই গতি আসবে।’

কুমিল্লা বিবির বাজার স্থল ও শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আহমেদ সালাউদ্দিন জানান, ‘ভারত রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা প্রদর্শন করায় বাংলাদেশে আমদানি বেড়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশেও ত্রিপুরার পণ্যগুলোর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। আবার বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন কিছু পণ্য যুক্ত হবে। এই বন্দর দিয়ে বেশি রপ্তানি হয় সিমেন্ট। সিমেন্টের দাম নিয়ে ভারতের অসন্তোষ ও কোভিড পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি তুলনামূলক কমেছে। সম্প্রতি এ সমস্যা কেটে গেছে। আশা করি, দ্রুততর সময়ের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি দুটোই বেড়ে যাবে।’