কুড়িগ্রামে তিস্তা ও ধরলাতীরে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র ভাঙন

কুড়িগ্রামে গত ১ সপ্তাহ ধরে তিস্তা ও ধরলা নদীতে তীব্র নদীভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।বিশেষকরে তিস্তা নদীর তীর ঘেষা রাজারহাটের গতিয়াশ্যাম,রামহরি উলিপুরে দলদলিয়া,গোড়াই এবং ধরলানদী তীরবর্তী ভাটলারপাড়ে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বর্ষা আসার আগেই নদীভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গনরোধে জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙ্গনরোধ করা যাচ্ছেনা।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা কাশিম বাজার লকিয়ার পাড় এলাকায় তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি,দোকান, মসজিদসহ স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকীর মূখে রয়েছে ঐতিহাসিক কাসিমবাজার হাটসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং বৃটিশ আমলে নির্মিত কাসিমবাজার আলিয়া মাদ্রাসা। চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ী আর আবাদী জমি। ভাঙ্গনের তীব্রতা এত বেশী যে মানুষ তাদের ঘরের জিনিষপত্র নিতে হিমশীম খাচ্ছে।

বৃষ্টি আর উজানের সামান্য পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তিস্তা নদীর ভাঙ্গন ভয়াল রূপ নিয়েছে। সোমবার ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায় ঘরবাড়িসহ আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভাঙ্গনকবলিত পরিবার গুলো। নদী থেকে মাত্র অর্ধ কিঃ মিঃ দূরে বাঁধের পারে অথবা মানুষের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। পলিথিন টাঙ্গিয়ে অথবা কোন ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর রাত কাটাচ্ছে। মানুষগুলো কোন রকমে রাত কাটালেও তাদেও গবাদি পশুগুলি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। বৃষ্টির পানি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদী সংলগ্ন চরের জমির উঠতি ফসলসহ বসতবাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীর তীরবর্তী মানুষের। তিস্তা নদীর ভাঙনে কাশিম বাজার হাট, নাজিমাবাদ স্কুল, কাশিম বাজার বালিকা বিদ্যালয়সহ সহস্রাধিক বাড়িঘর ঝুঁকিতে পরেছে। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। একদিকে করোনা ভাইরাস অন্যদিকে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনের মুখে এখন দিশেহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ। দুদিন আগেই তিস্তার ভাঙনে ৫টি আধাপাকা ঘর বিলিন হয়ে গেছে।

ভাঙনের শিকার বুলবুল আহমেদ বলেন, নদী আমাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। আমাদের যে দুতিনটি ঘর ছিল গত রবিবার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জমি জমা সব ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হচ্ছে। নিঃস্ব আমরা। নদী ভাঙ্গন রোধে সমাধান চাই। আর তা না হলে পুরো এলাকা বিলীন হয়ে যাবে। ছকিনা বেগম বলেন,ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। চলি গেচে। সন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশে পলিথিন বিছিয়ে কোন রকমে রাত কাটাচ্ছি। গরু, ছাগল,হাঁস-মুরগি নিয়া বিপদে পরেছি।গবাদিপশু গুলোকে বাহিরে রাখা হয়েছে। চোরের ভয়ে রাতে পালাক্রমে পাহারা দিতে হচ্ছে। ঝড় বৃষ্টির মধ্যে ও থাকতে হচ্ছে এমনি ভাবে।

বজরা ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল আমিন বলেন, আমার ইউনিয়ন এবং গাইবান্দা জেলার হরিপুর ইউনিয়নের সীমানায় তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ঘরবাড়ি, দোকান,মসজিদ বিলিন হয়েছে। দ্রæত ভাঙন রোধে কাজ না করলে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পরতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে-এ-জান্নাত রুমি বলেন, ভাঙনের কথা শুনেছি। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা করা হবে।

অন্যদিকে আসন্ন বন্যা মোকাবেলায় কুড়িগ্রামের নদ-নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ও ভাঙ্গন রোধে চলমান প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তারাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ।

তিনি সকালে জেলার রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাটের তিস্তা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ও সদর উপজেলার মোগলবাসায় ধরলার নদীর ভাঙ্গন রোধে চলমান প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুস শহীদ, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

পরিদর্শনকালে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, কুড়িগ্রামকে নদীভাঙ্গন থেকে রক্ষা করার জন্য ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। চলমান প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হলে নদী ভাঙ্গন ও বন্যার হাত থেকে এ জেলার মানুষ রক্ষা পাবে। এছাড়াও আসন্ন বন্যা মোকাবেলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।