কুড়িগ্রামে ৩৮ হেক্টর পুকুর-জলাশয় পুনঃখনন : ৩’শ মে.টন মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা

কুড়িগ্রামে মৎস্য বিভাগের আওতায় বর্ষা মৌসুম আসার আগে ৩৮ হেক্টর পুকুর-জলাশয়, বিল নার্সারী এবং বরোপিট পুনঃখনন সম্পন্ন করা হয়েছে। আসন্ন বন্যায় বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি না হলে বাড়তি ৩’শ মে.টন মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে একদিকে জেলার মাছের চাহিদা যেমন অনেকটাই পূরণ হবে তেমনি কর্মসংস্থান মিলবে ৫ শতাধিক বেকার মানুষের।

কুড়িগ্রাম মৎস্য বিভাগ জানায়, জেলার ২৬৮৩৪টি জলাশয়, ২০২টি বিল এবং ১২১ হেক্টর আয়তনের বরোপিট রয়েছে। এর মধ্যে চলতি অর্থ বছরের ১লা মার্চ ২০২১ইং উদ্বোধন হয় জেলার ৪১টি প্রকল্পের ৩৮.৩ হেক্টর বিল নার্সারী, জলাশয় এবং বরোপিট পুনঃখনন কাজ। ইতোমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এসব প্রকল্পের কাজ। ৪১টি প্রকল্পে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ১০ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা। আসন্ন বন্যায় বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি না হলে এসব প্রকল্পে ৩০০ মে.টন মাছ উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য হবে প্রায় সাড়ে ৪ চার কোটি টাকা।

সরেজমিনে কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী এবং উলিপুর উপজেলায় গেলে চোখে পড়ে এসব দৃষ্টিনন্দন মৎস্য প্রকল্প। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি সংশ্লিষ্ট এসব প্রকল্প রক্ষায় প্রয়োজন সরকারের নানামুখী উদ্যোগ। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বন্যায় প্রকল্পের পানি নিস্কাশনে বক্স কালভার্ট। কিন্তু অধিকাংশ প্রকল্পে ব্যবহার হয়ে থাকে পাইপ কালভার্ট। এতে ভরা বন্যায় পর্যাপ্ত পানি নিস্কাশনের সুযোগ না থাকায় ভেঙে যায় প্রকল্পের পাড়গুলো। ফলে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যায়। লোকসানের মুখে পড়ে মৎস্যজীবীরা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ছড়ার মাছ চাষী একেএম তাইজুল হক সাজু জানান,সরকারীভাবে জলাশয়গুলো পূনঃখনন করায় এগুলোতে মাছ চাষ করে লাভবান হওয়া যাবে।কেননা শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকবে।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মৎস্যজীবি আব্দুল বাতেন বলেন, প্রতি বছর বন্যায় ৪/৫ লক্ষ টাকার মাছ বন্যায় ভেসে যায়। এবার মৎস্য অফিস আমাদের বরোপিটের শক্তিশালী পাড় বেঁধে দেয়ায় আশা করছি এবার বন্যায় মাছ ভেসে যাবে না। চলতি বছর লাভের মুখ দেখতে পাব।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের মৎস্যজীবী বেলাল রহমান জানান, আমাদের প্রকল্পের ৪০জন সদস্য প্রতি বছর অনেক লাভের আশায় বরোপিটে মাছ ছেড়ে দেই কিন্তু ধরলা নদীতে প্রবল বন্যায় পাড় ভেঙে মাছ ভেসে যায়। তবে এবার মৎস্য বিভাগ পাড়গুলো সুন্দরভাবে বেঁধে দেয়ায় আমরা আশাবাদী এ বছর লাভ করতে পারবো।

এ ব্যাপারে কথা হলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, বন্যায় খননকৃত প্রকল্প রক্ষায় ইমারজেন্সি অর্থ বরাদ্দ না থাকায় প্রতি বছর এসব প্রকল্প এলাকা ভেঙে যায়। এতে মৎস্য চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া কুড়িগ্রামকে মাছ উৎপাদনে স্বয়ং সম্প‚র্ণ করতে মালিকানা জটিলতা, ইমারজেন্সি ফান্ড এবং স্থানভেদে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে বক্স কালভার্ট প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, এ বছর ইতোমধ্যে আমরা ৫ কোটি ১০ লক্ষ টাকায় ৪১টি প্রকল্পের ৩৮.৩ হেক্টর জলাশয়, বিল নার্সারী এবং বরোপিট পুনঃখনন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। এসব প্রকল্পে চলতি বছর ৩০০ মে.টন মাছ উৎপাদন সম্ভব বলে তিনি জানান।

প্রকল্প পরিচালক আলীমুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সারাদেশে মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং এসব প্রকল্প এলাকায় মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে বেকার সমস্যা নিরসনে কাজ করছি। কুড়িগ্রামে প্রচুর জলাশয়, বিল রয়েছে। এসব পরিত্যাক্ত জলাশয়ে বিপুল মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। পিছিয়ে পড়া কুড়িগ্রামের কথা বিবেচনা করে আমরা এ বছর কুড়িগ্রামে সর্বাধিক অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি। আশা করি আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।