কেউ ছাত্রী কেউবা গৃহিনী, করেছেন কর্মসংস্থান হয়েছেন স্বাবলম্বী
পাবনা সদর উপজেলার পৌর সদরের বাসিন্দা তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্যের পথে হাঁটছেন। নিয়েছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প থেকে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ। অনেকে শিল্পপতির হওয়ারও স্বপ্ন দেখছেন। অন্যের কর্মসংস্থানেরও চিন্তা করছেন। সারজানা হক, মিথিলা ফারজানা, শেখ রত্না আমিন, আদিলা বিশ্বাস, জেনিফার ডলিসহ আরও অনেক নাম। বয়সে সবাই তরুণী। কেউ ছাত্রী কেউবা গৃহিনী। স্বপ্ন দেখেছিলেন নিজেরাই হবেন উদ্যোক্তা। নিজে স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি করবেন অন্য ১০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
নিজের অভিজ্ঞতা ও অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং নিজের কর্মক্ষেত্রে সেই শিক্ষার প্রয়োগ উদ্যোক্তার একটি বিশেষ গুণ। সেই গুণটিই যেন পাবনা শহরে সিঙা মহল্লার বাসিন্দা মিথিলা ফারজানা লাভ করেছেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) পাবনা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের মতো পাবনার অনেক ছেলে-মেয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোগ নিয়ে এখন বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের মাধ্যমে আরও অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
বিসিক পাবনার সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, একজন উদ্যোক্তাকে প্রথমবার ব্যর্থ হলে কারণ খুঁজে দ্বিতীয়বার নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করা দরকার। কাজে সাফল্য অর্জনে তীব্র আকাঙ্খা উদ্যোক্তার চরিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য দিক।
মিথিলা ফারজানা জানান, পড়াশোনা শেষে গৃহবধূ হলেন। কিন্তু তিনি চিন্তা করেন তার নিজের কিছু করা দরকার। সে চিন্তা থেকে ২০১৭ সাল থেকে তিনি ‘বেবি কাঁথা’ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তার ব্যবসাটি বেশ সম্প্রসারিত হয়। তার অনলাইন পেজে অনেক গ্রাহকও আছেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ২০১৯ সালের দিকে তা হ্যাক হয়ে যায়। তিনি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন, কষ্ট পান। কিন্তু দমে যাননি। এবার পাবনার ঐতিহ্যবাহী মাটির তাঁতের লুঙ্গি (খটখটি তাঁত) নিয়ে তার ব্যবসা। তিনি বলেন, পাবনার মাটির তাঁতের লুঙ্গির অনেক সুনাম। কিন্তু পাওয়ারি লুমের কারণে ঐতিহ্যটি হারাতে বসেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি তার লুঙ্গির অর্ডার পাচ্ছেন। তার স্বপ্ন সারাদেশে মাটির তাঁতের লুঙ্গি পৌঁছে দেওয়া।
শেখ রত্না আমিন আর্কিটেকচার। তিনি ঢাকা থেকে পাবনায় এসে কিছু একটা নিজেই করার জন্য আগ্রহী ছিলেন। তিনি ঝুঁকি নিতে শিখেছেন। ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেছেন। তিনি খাবার সরবরাহসহ বাঙালির প্রিয় পিঠা তৈরি এবং সরবরাহ করছেন।
তিনি জানান, পাবনায় তাদের হোম মেড খাবার পৌঁছে দিতে বেশ কজন ডেলিভারীম্যান আছে। এছাড়া পিঠা তৈরি করে তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। তিনি ক্ষুদ্রতে সীমাবদ্ধ না থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন দেখেন। এজন্যই তো বিজ্ঞান ও শিল্পের সমন্বয়ে লেখাপড়া করে শিল্পকেই আঁকড়ে ধরেছেন। যে অবলম্বনে আরও বহু মানুষের কাজের ব্যবস্থা হবে।
রত্না বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে শুধু ব্যবসা করিনি, মানবিকাতর বিষয়টিও দেখেছি। কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) মহামারীর কারণে অনেক লোক বাড়িতে বন্দি হয়ে পড়েন। তখন আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীরাও ভয়ে তাদের কাছে যাননি। কিন্তু আমরা ঠিকই বাসায় গিয়ে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। উদ্যোক্তা হতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। তাই আমিও বিসিক পাবনা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এ প্রশিক্ষণ তাকে আগামী দিনে ব্যবসা সম্প্রসারণে বিরাট ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে বলে তিনি আশা করেন।
পাবনা পৌর সদরের বাসিন্দা আদিলা বিশ্বাস হিসাব বিজ্ঞানের ছাত্রী। চাইছেন নিজেই উদ্যোগ নিয়ে কিছু করতে। তিনি বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করছেন। গুঁড়ো মসলা, বিন্নি চাল ও আতপ চালের গুঁড়া এবং মরিচের গুঁড়ার চাহিদা বেশি ক্রেতাদের। এ ছাড়া হলুদ, ধনিয়া, বিরিয়ানি মসলা, মাংসের মসলা, জিরাসহ অনলাইনে প্রতিমাসে বিক্রি শুরু করেছেন লাখ টাকার পণ্য। এখন এ উদ্যোক্তা স্বপ্ন দেখছেন মাসে লাখ টাকা আয়ের। সেজন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন আধুনিক একটি মসলা কারখানা স্থাপনের। গুণে মানে তার পণ্য ভালো হওয়ায় ব্যবসায়িক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
আদিলা জানান, আগামী দু-এক বছরের মধ্যে বেশকিছু জনবল নিয়োগ দিতে পারবেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন তার ব্যবসা ধীরে ধীরে আরও বড় হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন। সেগুলো তিনি ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারবেন বলে আশা করছেন।
জেনিফার ডলি খাবার নিয়ে কাজ করছেন। উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনতে চাইলে জেনিফার তিনি বলেন, অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল ব্যবসা করার। কিন্তু কী করবো ভেবে পাইনি। কিভাবে শুরু করবো, কী পণ্য নিয়ে কাজ করবো লক্ষ্য স্থির করতে পারছিলাম না। অবশেষে ভাবলাম হোমমেড খাবার নিয়ে কাজ করবো। এখন হোমমেড খাবার ডেলিভারীতে অনেক সুনাম কুড়িয়েছি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) পাবনার সহকারী প্রকৌশলী আ. লতিফ বলেন, নিজের সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান অন্যের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মানবিক সেবা তৈরিতে উদ্যোক্তাদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি নিজের ভাগ্য পরিবর্তন ও সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন উদ্যোক্তারা। পাবনার অনেক তরুণ-তরুণী আজ অন্যের কাছে চাকরি জন্য না ঘুরে নিজেরাই কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছেন।
বিসিক পাবনার ডিজিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, বিসিক পাবনার বহু উদ্যোক্তার পাশে আছে। প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের ব্যবসাকে আরও গতিশীল ও লাভজনক করার পথ দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চাকরি না খুঁজে আজ নিজেরাই চাকরিদাতা হয়েছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন