কেউ নবাবের পুত থাকলেও আমি ছিলাম ফকিন্নির পুত : এমপি বাদল

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে দেয়া বক্তব্যকে সমর্থন করে বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের নৌকার প্রার্থী জাসদ নেতা এমপি মঈনউদ্দিন খান বাদল এবার বলেছেন, ‘কেউ যদি মনে করেন, উনি তখন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পুত ছিলেন, তিনি থাকতে পারেন। কিন্তু আমি ফকিন্নির পুত ছিলাম।’

বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের মুখে তিনি এ কথা বলেন।

মঈনউদ্দিন খান বাদল নিজের দেয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমি আবারও বলব, আমরা একসময় ফকিন্নির পুত ছিলাম। এখন আমরা রাজার পুত হয়েছি। এই বক্তব্য বিকৃত করা উচিত নয়। কেউ যদি মনে করেন, উনি তখন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পুত ছিলেন, তিনি থাকতে পারেন। কিন্তু আমি ফকিন্নির পুত ছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামবাসীকে ফকিন্নির পুত বলিনি। এটা যদি কারও মাথায় আসে, এটা অত্যন্ত অন্যায়। আমরা, মানে বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত ছিলাম অর্থাৎ লেস ডেভেলপ কান্ট্রি। সারাবিশ্বে একটা সময় আমাদের খাদ্য ভিক্ষা করে চলতে হত। সেই জায়গা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মিড ইনকাম ইকোনমির দেশে নিয়ে গেছেন। আমি শুধু তুলনা বোঝানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এটা বলেছিলাম।’

প্রসঙ্গত, গত ১৯ ডিসেম্বর নগরীর লালদিঘী মাঠে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে জাসদ নেতা ও চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের মহাজোট প্রার্থী, বর্তমান এমপি মঈন উদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘ঢাকা থেকে আপনি যে আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন, এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ। কখনও কল্পনা করি নাই এটা সম্ভব হতে পারে ৷ ১০ বছর আগে আমরা ছিলাম ফকিন্নির পুত, ১০ বছর পরে আমরা এখন রাজপুত।’

এরপর থেকে তার এ বক্তব্য নিয়ে চট্টগ্রামের লোকজনের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে মানুষের তীব্র ক্ষোভ পরিলক্ষিত হয়।

বাদলের এই বক্তব্যর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রচণ্ড সমালোচনা করেন চট্টগ্রাম-৮ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষ ফকিন্নির পুত নয়, বাদল সাহেব নিজে মানসিক ও রাজনৈতিকভাবে ফকিন্নির পুত ছিলেন। আওয়ামী লীগের নৌকার ওপর ভর করে তিনি রাজার পুতে পরিণত হয়েছেন।’

বৃহস্পতিবার মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে প্রচারণা চালাতে গিয়ে তেমন কোনও সংঘাত হয়নি। দুয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিএনপির প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা চালাতে পারেনি, এমন নয়। চট্টগ্রাম শহরে পত্রিকা-টিভি খুললেই তো প্রার্থীদের প্রচারণা চোখে পড়ে। আসলে তারা মানুষের সাড়া না পেয়ে এবং পরাজয় নিশ্চিত জেনেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন।’

বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নির্বাচন সংক্রান্ত বৈঠক নিয়ে বিএনপি নেতারা নোংরা রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা আসবেন, কথা বলবেন, মতামত চাইবেন, মতামত দেব আমরা। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটা সাদা চামড়ার মানুষকে নিয়ে এসে মনগড়া বক্তব্য-বিবৃতি দেয়ার যে নোংরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে, আমরা এই বিকৃত মানসিকতার প্রতিবাদ করছি।’

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন বাচ্চু, প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, আইন সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, জাসদ নেতা ইন্দুনন্দন দত্ত প্রমুখ।