কেন হয় ডায়াবেটিস? মুক্তির উপায়
ডা: মো: শাহজালাল চৌধুরী : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রতি সপ্তাহে ৩-৫ বার ব্যায়াম করা, শরীরের আদর্শ ওজন বজায় রাখা, মানসিক চাপ বিনোদনে রূপান্তরে করা, যা রক্তের গ্লকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধক হিসেবে রসুন বা করলা, মেথি এসব তরকারি বেশি খাওয়া
মানব জীবনচক্রের একটি সর্বজনীন স্তর হচ্ছে বার্ধক্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে ২০০০-২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ১১-২২ শতাংশই হবেন প্রবীণ। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান প্রবীণদের নানাবিধ সমস্যাগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য সমস্যা একটি প্রধান সমস্যা।
আর নবীন কিংবা প্রবীণ বিশেষ করে প্রবীণ বয়সের বেশির ভাগ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে ডায়াবেটিস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৩০ সালের রোগ মৃত্যুও কারণগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস সপ্তম স্থানীয় রোগ।
ডায়াবেটিস হছে রক্তে ইনসুলিন স্বল্পতা বা রক্তে ইনসুলিন অকার্যকারিতার ফলে সৃষ্ট একটি বিপাকীয় রোগ। ডায়াবেটিসের ধরন বিভিন্ন এসব হচ্ছে- টাইপ-১ ডায়াবেটিস, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন-ডায়াবেটিস, যুবদের ডায়াবেটিস, শিশুদের ডায়াবেটিস। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমন এবং বয়সকালে যে ডায়াবেটিস বেশি হয় তা হচ্ছে টাইপ-২ ডায়াবেটিস।
টাইপ-২ ডায়াবেটিসকে এনআইডিডিএম বলা হয়, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে কার্বোহাইড্্েরট, চর্বি ও আমিষ জাতীয় খাবার বিপাকে গোলমাল দেখা যায়। শরীরের কোষ কলায় রক্তে ইনসুলিনের অকার্যকারিতা বা এর অভাবে গ্লকোজ ব্যবহার করতে না পারায় রক্তে গ্লকোজের মাত্রা বেড়ে গিয়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়।
বাংলাদেশসহ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশগুলোয় প্রায় ৮০% মানুষ ডায়াবেটিস নিয়ে বসবাস করছে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস জীবনধারা বা অসম জীবনযাপনজনিতও রোগ বলা হয়।
এসব হচ্ছে অপরিমিত খাবার গ্রহণ, আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, অলস জীবনযাপন করা, অপর্যাপ্ত বা ৬ ঘণ্টা বা ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমানো, ধূমপান, সাদাপাতা, জর্দা সেবন, মানসিক দুশ্চিন্তা, পরিবেশের বিষাক্ত পদার্থ, দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ, কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়া হিসেবে, বংশগত কারণে এবং সর্বোপরি শরীরের অতিরিক্ত ওজনের কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ পদ্ধতি হচ্ছে খালি পেটে রক্তের গ্লকোজের মাত্রা ৭.০ সসড়ষ অথবা খাবার পরে রক্তের গ্লকোজ/জইঝ মাত্রা-১১.১ সসড়ষ এবং পাশাপাশি দেহে ডায়াবেটিসের লক্ষণ থাকা।
অথবা রক্তের ঙএঞঞ পরীক্ষায় রক্তের গ্লকোজের মাত্রা ১১.১সসড়ষ বেশি থাকে এবং প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষায় গ্লুকোজের উপস্থিতি পাওয়া গেলে কোনো ব্যক্তির ডায়াবেটিস আছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ছাড়া রোগীর রক্তের গ্লকোজ নিয়ন্ত্রিত আছে কি না তা জানার জন্য রক্তের হিমোগ্লোবিন অ১ঈ নামক পরীক্ষা করে দেখা।
ডায়াবেটিসের কারণে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হচ্ছে- বারবার প্রস্রাবের বেগ হওয়া, পানির পিপাসা বেড়ে যাওয়া, খাবারের ইচ্ছে বেড়ে যাওয়া, শরীরের মাঝামাঝি ওজন বেড়ে যাওয়া, ত্বকে ছোট ছোট গুটি দেখা যায়, মূত্রনালী, কিডনি বা ত্বকে ঘন ঘন সংক্রমণ হয় বা সারতে দেরি হওয়া, দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দেয় বা যৌন সমস্যা দেখা দেয়া।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে মূল লক্ষ্য হবে ডায়াবেটিস হওয়ার মূল কারণগুলো শনাক্ত করে তা প্রতিরোধ করা, আগেই বলা হয়েছে ডায়াবেটিস যেহেতু জীবনধারা ও খাদ্যাভাসজনিত রোগ, তাই শৃঙ্খলিত জীবনযাপনই এ রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। এ ছাড়া রক্তের গ্লুকোজ পর্যবেক্ষণ করা, ৬ ঘণ্টার কম ব্যবধানে খাবার না খাওয়া, চিনি বা মিষ্টিযুক্ত খাবার কম খাওয়া, ফলমূল শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার ও পানি বেশি খাওয়া।
প্রতি সপ্তাহে ৩-৫ বার ব্যায়াম করা, শরীরের আদর্শ ওজন বজায় রাখা, মানসিক চাপ বিনোদনে রূপান্তরে করা, যা রক্তের গ্লকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধক হিসেবে রসুন বা করলা, মেথি এসব তরকারি বেশি খাওয়া।
এ ছাড়া নিয়মিত একটি কাঁচা করলা থেকে নির্যাস বের করে সকালে ও রাতে খেতে হবে অথবা জামবিচির শ্বাসের মিহিগুঁড়ো ৩ গ্রাম পরিমাণ পানিসহ দিনে ২ বার খাবেন। আর মেথি, রসুন জাতীয় ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি ইউনানি ওষুধ, ট্যাবলেট দোলাবি, ট্যাবলেট আলিসা, ক্যাপসুল জিনটোন, ক্যাপসুল সেলভিন হামদর্দের ক্লিনিকগুলো থেকে চিকিৎসকের পরামর্শমতো খেতে পারেন।
তাই আসুন আমরা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে ডায়াবেটিসজনিত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দূর করি। এতে ডায়াবেটিসজনিত চিকিৎসা খরচ যেমনি অনেক কমবে, তেমনি দীর্ঘ বয়সকাল হবে সুস্থ, সক্ষম ও আনন্দময়।
লেখক : কমিউনিটি মেডিসিন, হাকিম সাঈদ ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন