‘কোনো সহশিল্পী দেহ ব্যবসা করে না’
চলচ্চিত্র মন্দার বাজারে বিপাকে পড়েছেন চলচ্চিত্রের সহশিল্পীরা। কাজ নেই ঘরে খাবার নেই, এরই মধ্যে এলো রোজা। খেয়ে না খেয়ে রোজা রাখলে ইফতার করতে আসতে হয় তাদের চিরচেনা এফডিসিতে। এখানে এসেও এবার বিড়ম্বনায় পড়েছেন চলিচ্চিত্রের সহশিল্পীরা।
প্রথমদিনে এফডিসিতে ইফতারে এসে বিড়ম্বনার শিকার হলেন সহশিল্পী পারভিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘বাসায় কোনো খাবার ছিল না। এ কারণে না খেয়েই রোজা রেখেছি। বিকেল ৪টায় মনের মধ্যে একটা শান্তি নিয়ে ঘর থেকে বের হলাম। ইফতারটা হয়তো ঠিক মতো করতে পারব। এফডিসিতে অনেক সংগঠন রয়েছে। সবাই প্রতিদিন ইফতারের ব্যবস্থা করে।
আমরা গেলে সুন্দর করে ইফতার করায়। এফডিসি পৌঁছে দেখি ৫টা বেজে গেছে। গেট দিয়ে ঢুকার সময় দারোয়ান জানিয়ে দিলেন মাগরিবের আযানের পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের হতে হবে। ইফতার করে কোনো শান্তি পাইনি। কারণ, ইফতার শেষ হওয়ার আগেই দারোয়ান এসে আমাদের বের করে দিল।’ প্রথম দিনের সেহরি ও ইফতার নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন চলচ্চিত্র সহশিল্পী পারভিন আক্তার।
এখন অনেকটাই কমে গেছে চলচ্চিত্র নির্মাণ। এ কারণে বেকার হয়ে গেছে চলচ্চিত্রের সহশিল্পীরা। এদের মধ্যে অনেকেই চলে গেছে গ্রামের বাড়িতে। তবে পারভিন আক্তার, ‘মুখ ও মুখোশ’ ছবির অভিনয় শিল্পী বিলকিস বারির মেয়ে বুলু বারি, শান্তা, ঝর্ণা, সেফালী, স্বপ্না, জারা, বিনা, মর্জিনা, জরিনা, নূপুরের মতো বেশ কিছু শিল্পী এখনো এফডিসিতে নিয়মিত আসেন। শান্তি মতো ইফতার করতে না পেরে এরা সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কেন বের করে দেওয়া হলো জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দারোয়ান বলেন, ‘গতকাল কোনো একটি পত্রিকায় নিউজ হয়েছে যে এখানে নাকি সহশিল্পীরা দেহ ব্যবসা করে, এ কারণে ৫টার পর সব মেয়েকে এফডিসি থেকে বের করার নির্দেশ রয়েছে আমরাদের ওপর।’
বিষয়টি নিয়ে বুলু বারি বলেন, ‘দেখেন আমার বয়স এখন ৭০ বছরের কাছাকাছি। এখানে আমরা যারা নিয়মিত আসি তাদের সবাই চিনে। কারণ, আমরা এখানে জন্মের পর থেকেই আসছি। যারা আসে এদের প্রায় সবার বয়স ৪০ এর কাছাকাছি। এরা কেমন করে দেহ ব্যবসা করবে।’
নূপুর বলেন, ‘আমি এফডিসির ৩টা সংগঠনে ঝাড়ু দেই। এটা দিয়ে আমার সংসার চলে। পারভিন কেন্টিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। বাইরে দাঁড়িয়ে যারা চা খায়, তাদের নিয়ে চা খাওয়ায়। সেখান থেকে যা টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলে। এখন আমাদের মতো মানুষকে দেহ ব্যবসার কথা বলে ছোট করা হচ্ছে।’
সহশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি অনেক দুঃখজনক। আমি গত বিশ বছর ধরে এফডিসিতে সহশিল্পী সরবরাহ করি। কাজ না পেয়ে অনেকেই বাড়ি চলে গেছে। আর কিছু রয়েছে যারা চলচ্চিত্রের মায়া ছাড়তে পারে না। তারাই থেকে গেছে এখানে। আর তারা প্রায় প্রতি দিনই এফডিসিতে আসে। আমাদের মতো মানুষের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নিয়ে বেঁচে রয়েছে।’
মিজানুর রহমান জোর দাবি করে বলেন, এখানকার কোনো শিল্পী দেহ ব্যবসা করে না। আরে এরা তো সন্ধ্যা হওয়ার আগেই এফডিসি থেকে বের হয়ে যায়। যারা দেহ ব্যবসা করে তাদের নিয়ে নিউজ করার মতো সাহস কারো নেই। তাদের সন্ধ্যা কেন, গভীর রাতেও যদি এফডিসিতে আসে তাহলে দারোয়ান তাকে প্রশ্ন করার সাহস পাবে না। বরং সালাম দিয়ে গেট খুলে দেবে। দেহ ব্যবসা করলে তারা(সহশিল্পীরা) কেন এফডিসিতে ঘুরবে। তারাও তো গাড়ি হাকাবে, পাঁচ তারকা হোটেলে আড্ডা দেবে।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘আসলে একটা চক্র আমাদের চলচ্চিত্রকে মানুষের মাধ্যে খারাপ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। কারণ, অনুসন্ধান করে নিউজ করার ইচ্ছে থাকলে অনেক বিষয় রয়েছে করার মতো, সহশিল্পীদের নিয়ে বাজে কথা লিখত না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন