কোন পথে যাচ্ছে সৌদি আরব

সৌদিতে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে বেশ কয়েকজন রাজপুত্র, বর্তমান মন্ত্রী এবং কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে সৌদি রাজপরিবারের সদস্য, মন্ত্রী এবং ব্যবসায়ী গ্রেফতারের ঘটনা কেবল শুরু। খবর বিবিসি।

অ্যাটর্নি জেনারেল শেইখ সৌদ আল মোজেব এক বিবৃতিতে বলেন, যেখানেই দুর্নীতি আছে তা সমূলে ধ্বংস করার জন্যই এ ধরপাকড়। এটাতো কেবল অভিযানের শুরু।

সৌদি যুবরাজ মোহম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে এ কমিটি দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। শনিবার নতুন এ কমিটি গঠন করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্তদের আটক করা শুরু করে।

আকস্মিক এ ধরপাকড়ের ঘটনাকে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের (৩২) ক্ষমতার উত্থান এবং একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ক্রাউন প্রিন্সের নেতৃত্বে গঠিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে ১১ যুবরাজ, চার মন্ত্রী এবং আরও বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীকে আটকের নির্দেশ দেয়া হয়। সুপরিচিত ধনকুবের ব্যবসায়ী প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালালও আটক হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন।

তবে আটককৃত যুবরাজ ও মন্ত্রীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। ঠিক কোনো দুর্নীতির অভিযোগে তাদেরকে আটক করা হয়েছে সে বিষয়টিও স্পষ্ট করা হয়নি।

তবে সৌদি প্রিন্স সালমানের এমন পদক্ষেপের বিষয়টিকে ভালো চোখেই দেখছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক টুইট বার্তায় তিনি সৌদির প্রশংসা করে বলেন বলেন, বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এবং ক্রাউন প্রিন্সের মোহাম্মদ বিন সালমানের ওপর আমার ভরসা আছে। তারা ঠিকভাবেই জানে যে তারা কি করছেন। যাদের আটক করা হয়েছে তারা বছরের পর বছর দেশকে শোষণ করছিল।

সাম্প্রতিক এ আটকের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনেক ক্ষমতাধর প্রিন্স, ব্যবসায়ী এবং মন্ত্রী ক্রাউন প্রিন্সের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে ফেঁসে যাচ্ছেন।

২০১৫ সালে মোহাম্মদ বিন সালমানের বাবা সৌদির বাদশাহ হওয়ার পর থেকেই মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম আলোচনায় আসতে থাকে। তার জন্ম ১৯৮৫ সালের ৩১ আগস্ট।

সালমান বিন আবদুল আজিজের তৃতীয় স্ত্রীর বড় সন্তান মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আইন শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেছেন।

২০০৯ সালে মোহাম্মদ বিন সালমানকে তার বাবার বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ২০১৩ সাল থেকে মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতার কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন। তখন তাকে মন্ত্রীর মর্যাদায় ক্রাউন প্রিন্স কোর্টের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সৌদিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। বিশেষ করে ৮৫ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে সৌদি আরবে মধ্যপন্থী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে সবাইকে হতবাক করে দিয়েছেন।

ভিশন ২০৩০ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সৌদি আরবের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যাপক পরিবর্তনে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কট্টরপন্থী সৌদিতে সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে নারীদের ওপর থেকেও বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। দেশকে আধুনিকায়নে গড়ে তুলতে পূর্বের অনেক ধ্যান-ধারণা থেকে সরে এসেছে সৌদি। মাঠে বসে নারীদের খেলা দেখা, গাড়ি চালানোসহ বেশ কিছু বিষয়ে নারীদের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে যা আগে নারীরাও চিন্তাও করতে পারতেন না।

ক্রাউন প্রিন্স তার সম্ভাব্য বিরোধীদের সরিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ এবং ধর্মভিরু উভয় পক্ষেই নিজের আধিপত্য বিস্তারে জন্যই দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নামে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয় কিন্তু সমালোচকরা বলছেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছেন।