কোরআনের আয়াত স্মরণ করিয়ে ন্যায়বিচার দাবি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এ দিন ধার্য করেন। এদিন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে যুক্তিতর্ক শেষ করেন। বিরতি দিয়ে দেড়টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আসামি সলিমুল হক ও শরফুদ্দিনের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করেন আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান।

এ সময় মিজানুর রহমান বলেন, প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) নিজেই এ মামলা বিশ্বাস করে না। কারণ, নথি গায়েবের কোনো ঘটনায় ঘটেনি। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতো, তাহলে পেনাল কোডের ২০১ ধারায় তারা মামলা করতো। কিন্তু, তারা এ ধারায় কোনো মামলা করেনি।

এ সময় তিনি সুরা বনি ইসরাইলের ২১ এবং সুরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যয় ন্যায়বিচার করা ফরজ, ফরজে আইন- বিচারককে স্মরণ করিয়ে দিয়ে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। এর মাধ্যমে এ মামলার আসামি খালেদা জিয়া, সলিমুল হক ও শরফুদ্দিনের পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক খণ্ডন শুরু করেন। শুরুতেই তিনি কত দিনে মামলা শেষ হয়েছে, তার বর্ণনা দেন।

পরে কাজল বলেন, মূল নথি নেই, হারিয়ে গেছে এসব উনারা (আসামিপক্ষের আইনজীবীরা) বলে গেছেন। ২০১ এর কথা বলেছেন। আমি বলব, এখানে ২০১ এ কোনো চার্জ লাগবে না।

রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ১৯৯১ সালে টাকা আসল, ১৯৯৩ সালে ট্রাস্ট গঠন করা হলো, সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করে টাকা রাখা হলো…।

এতক্ষণ পর্যন্ত আদালত ভালোই চলছিল। হঠাৎ করেই বিকেল তিনটার দিকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মোশাররফ হোসেন কাজলের বক্তব্যের মাঝখানেই উঠে দাঁড়ান খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান।

আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি কড়া ভাষায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, আপনি কিসের ওপর আর্গুমেন্ট করছেন? ফ্যাক্টের ওপর আর্গুমেন্ট করেন।

এরপর জবাবে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, স্যার (রেজাক খান), আমি ফ্যাক্টের ওপরই আর্গুমেন্ট করছি। আপনি আঙুল দেখাবেন না।

রেজাক খান উচ্চস্বরে বলেন, পত্রপত্রিকা খুললেই দেখছি, ম্যাডাম এখনই কারাগারে চলে যাবেন। এগুলো থামাতে পারেন না? ম্যাডাম হাজতে চলে যাবেন, এগুলো কি? আপনি ফ্যাক্টের মধ্যে আর্গুমেন্ট করবেন…।

এরপরই আদালতের অনুমতি নিয়ে খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, রেজাক সাহেব একজন সিনিয়র আইনজীবী। সিনিয়র হতে কি লাগে সবার জানা আছে। পিপি হয়ে গেলেই সিনিয়র হওয়া যায় না!

এরপর মোশাররফ হোসেন কাজল মামলার কিছু আইনি দিক তুলে ধরে তার যুক্তি খণ্ডন শেষ করেন। পরক্ষণেই খালেদা জিয়ার পক্ষে শেষবারের মত যুক্তিতর্ক তুলে ধরার সুযোগ দেন আদালত।

তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী রেজাক খান আজ যুক্তিতর্ক করতে নারাজি প্রকাশ করেন। তবে আদালত বলেন, আজকেই বলেন। আদালতকে রেজাক খান পাল্টা বলেন, আপনি কি আমাকে বাধ্য করবেন। যদি করেন তাহলে বলব।

এ সময় আদালত বলেন, না, না বাধ্য না। আপনি পড়েন। এখনো কোর্টের টাইম আছে।

এরপর উচ্চস্বরকে কথা বলার জন্য আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন রেজাক খান। তিনি বলেন, মাননীয় আদালত কথা বলার সময় আমরা হাত উঁচু করে কথা বলি। কিন্তু, এজন্য ভিন্ন অর্থ দেওয়া যাবে না।

পরে তিনি মামলার আইনি বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন, এ মামলার এজাহার বাইরে প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিহীন।

রেজাক খান তার বক্তব্য শেষ করলে আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী আহসান উল্লাহ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কিছু আইনি দিকের জবাব দেন। এর মাধ্যমে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়।

এরপর আদালত রায়ের জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্কের জন্য আগামী ৩০, ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

পরে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশীদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন— খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগ) জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।