কোরআন ও হাদিসের আলোকে দৈনন্দিন জীবনে করণীয়

ইসলাম ধর্ম আমাদের সবাইকে নীতি ও নৈতিকতা শিক্ষা দেয়। দৈনন্দিন জীবনে আমরা কী করব কীভাবে জীবন পরিচালিত করলে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব সেটাই আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত।

একজন মুমিনের জন্য দৈনন্দিন জীবনে করণীয় কী হওয়া উচিত-

১. বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করা। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ তিরমিজি।

২. প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিনের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য : আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, কোনো কিছুকেই তাঁর অংশীদার বানিও না, মা-বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর, যারা তোমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, এতিম, মিসকিন, প্রতিবেশী, কাছের প্রতিবেশী, পাশের লোক, পথচারী ও তোমার অধিকারভুক্ত দাস-দাসী তাদের সঙ্গেও ভালো ব্যবহার কর।’ সুরা নিসা আয়াত ৩৬। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ইমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’

৩. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা : আল্লাহ বলেন, ‘সৎ কর্ম হলো যে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব ও নবী-রসুলদের ওপর ইমান আনবে এবং তার ধনসম্পদের ওপর ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও তার আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, পথিক, দাসমুক্তি ও দুস্থ মানুষের জন্য ব্যয় করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে এবং কৃত অঙ্গীকার পূরণ করে এবং অভাবে, কষ্টে, রোগ-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধরে তারাই হলো মূলত সত্যবাদী এবং প্রকৃত তাকওয়া অবলম্বনকারী মানুষ।’ সুরা বাকারা আয়াত ১৭৭।

৪. নিয়মিত জামাতে সালাত আদায় করা : সালাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তোমরা সালাত কায়েম কর এবং জাকাত আদায় কর।’ সুরা বাকারা আয়াত ৪৩।

৫. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা মুমিনের কর্তব্য : আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং ন্যায়ের আদেশ দেবে, আর অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকবে। এরাই সত্যিকারের সফল।’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ১০৪।

৬. পরস্পরের মধ্যে সালাম বিনিময় : পরস্পরের মধ্যে সালাম বিনিময় সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম নিয়ামক। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ সালাম দেয় বা অভিবাদন জানায় তখন তোমরা তার চাইতেও উত্তম পন্থায় তার জবাব দাও, কিংবা ততটুকু ফেরত দাও।’ সুরা আন নিসা আয়াত ৮৬।

৭. ঐক্যবদ্ধ জীবন-যাপন মুমিনের দায়িত্ব : আদর্শ সমাজ নির্মাণে ইসলামী জীবনযাপনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর, কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না।’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ১০৩।

৮. সম্প্রীতি ও সহাবস্থান বজায় রাখা : সমাজে সহাবস্থান ও সম্প্রীতি বজায় রাখা মুমিন বান্দার দায়িত্ব ও কর্তব্য।

৯. পরস্পরের দুঃখ-কষ্টে এগিয়ে আসা : কোনো মুমিন বান্দা অন্য মুমিনের দুঃখ -কষ্টে এগিয়ে এলে আল্লাহও তার বিপদে সাহায্য করেন।

১০. এতিম ও মিসকিনের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের সম্পদ গ্রাস না করা : এতিম ও মিসকিনকে সহায়তার প্রতি ইসলামে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা যেন তাদের পেটে আগুন ভক্ষণ করায়। আর তারা শিগগিরই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ সুরা নিসা আয়াত ১০। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে দৈনন্দিন জীবনে উপরোক্ত আমলগুলো করার তৌফিক দান করুন।