ক্যানসারে মৃত্যুমুখে বিয়ে, অবশেষে না ফেরার দেশে প্রেমিকা

ক্যানসারে আক্রান্ত জেনেও প্রিয়তমা ফাহমিদা কামালকে হাসপাতালেই বিয়ে করেছিলেন মাহমুদুল হাসান। কিন্তু তাকে আর বাঁচানো গেল না। অবশেষে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

সোমবার (২১ মার্চ) সকাল ৭টা ২৩ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরীর মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালে বিয়ের দশ দিনের মাথায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফাহমিদা কামাল।

গত ৯ মার্চ রাতে মেডিকেল সেন্টারের বেডে জীবন-মৃত্যুর সন্নিকটে দাঁড়িয়ে থাকা ভালোবাসার মানুষ ফাহমিদাকে বিয়ে করেছিলেন হাসান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যমসহ সারা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফাহমিদা ও বর হাসানের জন্য সবাই দোয়া করতে থাকে এবং দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী তাদের ত্যাগে ও অমর প্রেমের ইতিহাস গড়ায়, তারা প্রশংসায় ভাসতে থাকে।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ফাহমিদার শরীরে রেক্টাম ক্যানসার ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঢাকা এভারকেয়ার এবং পরে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে উন্নত সব ধরনের চিকিৎসা করানো হয়। এক পর্যায়ে ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দেন এবং তার আর কোনো চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিলে তাকে এই মাসের ৫ তারিখ দেশে নিয়ে এসে স্থানীয় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসায় রাখা হয়।

তখন ক্রমাগতভাবে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তার প্রেমিক মাহমুদুল হাসান ৯ মার্চ রাতে হাসপাতালের বেডে তাকে বিয়ে করেন। সেই থেকে হাসান ও তার পরিবার ফাহমিদার পাশে ছিলেন।

অবশেষে সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে সোমবার (২১ মার্চ) সকাল ৭টা ২৩ মিনিটে ফাহমিদা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সোমবার বাদ আসর ফাহমিদার নিজ বাড়ি দক্ষিণ বাকলিয়া হাজী আবদুস সালাম মাস্টারের বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। ফাহমিদার অকাল মৃত্যুতে নগরজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

শিক্ষা জীবনেই তাদের পরিচয় হয়েছিল। সেই থেকে পরিণয়ের শুরু। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা মাহমুদুল হাসান আর ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (ইইউবি) থেকে এমবিএ শেষ করা ফাহমিদা কামাল শিক্ষাজীবন থেকেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ হলে দুজনে বিয়ে করবে।

চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর ছেলে মাহমুদুল হাসান ও চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় পরিবার নিয়ে থাকতেন ফাহমিদা। হঠাৎ করেই শারীরিক সমস্যা অনুভব করতে থাকেন ফাহমিদা। শরীর আস্তে আস্তে খারাপ হতে থাকে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানতে পারেন, তার শরীরে বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি ক্যানসার।

অবশেষে ৯ মার্চ রাতে মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। লাল বেনারসি, গলায় সোনার হার পরিয়ে কনে সাজানো হয় ফাহমিদাকে। সেই সঙ্গে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে বর বেশে সাজেন হাসান।

মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও কাজী ডেকে ফাহমিদাকে বিয়ে করেন হাসান। আকদ, মালাবদল ও কেক কেটে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এ যেন ভালোবাসার অগ্নিপরীক্ষা। সেই পরীক্ষাতেই অন্তত মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত প্রিয় মানুষটির মুখে হাসি ফুটাতে চান হাসান। ক্ষণিকের জন্য প্রাণঘাতী ক্যানসারকে জয় করে ফাহমিদা হয়ে ওঠেন অন্য এক পৃথিবীর বাসিন্দা। সমস্ত স্বর্গীয় সুখ যেন অনুভূত হয় তার।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। ফাহমিদা পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অন্য জগতে পাড়ি জমিয়েছেন। জন্মালে মরতে হবে এটি অপ্রিয় সত্য। ঘাতক ক্যানসারে এভাবে ফাহমিদার চলে যাওয়া কোনোভাবেই মানতে পারছেন না নগরবাসী। তবে, তাদের প্রেম কাহিনী মানুষের মনে আজীবন বেঁচে থাকবে বলে মনে করেন সকলে।