ক্ষতিকারক কীটনাশক ছাড়াই ফসল চাষে সফল পাবনার কৃষক হযরত আলী

কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়া ফসল ফলানোর কথা এখন চিন্তাই করতে পারেনা কৃষক। অথচ এমন একটা সময় ছিলো যখন কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ছাড়াই ফসল উৎপাদন করা হতো। কীটনাশকের উপকারিতার চেয়ে ক্ষতির দিকটা বেশি হলেও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার। তবে এখনও সচেতন এমন অনেক কৃষক রয়েছেন যারা কীটনাশক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিকভাবে ক্ষেতের পোকা-মাকড় দমন করে ফসল উৎপাদন করে থাকেন।

তেমনি একজন কৃষক হযরত আলী সরদার। বয়স তার প্রায় ৫০ এর বেশী। স্ত্রী, সন্তানসহ ৫ সদস্যের সংসার তার। সে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ভবানীপুর দিয়ারপাড়া মহল্লার মৃত মমতাজ আলী সরদারের পুত্র। তার নিজের বেশী জমি নেই বললেই চলে। নিজের ২ বিঘা জমি আর অন্যের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন তিনি। কৃষিকাজের পাশাপাশি গাভিও পালন করেন হযরত আলী।

পড়ালেখা না জানলেও কীটনাশকের ক্ষতিকর দিকটা তিনি আঁচ করতে পেরেছেন। সমাজে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছেন এক সচেতন কৃষক হিসেবে।

তাই তো দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জমিতে কোন রকম কীটনাশক ব্যবহার না করে ফসল ফলিয়ে আসছেন সহজ সরল স্বভাবের এই মানুষটি। ধানের ফলনও পেয়েছেন ভাল।

এ প্রতিনিধিকে কৃষক হযরত আলী জানান, ৭/৮ বছর আগে তিনি জানতে পারেন ধান ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করলে ক্ষেতের ক্ষতি হয় । তাছাড়া অতিরিক্ত টাকাও খরচ হয়। তাই তিনি কৃষিবিদ ও কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে কীটনাশক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিকভাবে ক্ষেতের পোকা-মাকড় দমন করতে শুরু করেন। তিনি জমিতে ধানের চারা রোপণের পর ক্ষেতে গাছের ডালপালা পুতে রেখে পাখি বসানোর ব্যবস্থা করেন। এতে পাখি ধান ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে ফেলে ফসল রক্ষা করে।

তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৭ বিঘা জমিতে ব্রি-২৯ জাতের ধানের আবাদ করেছেন। আশপাশের অনেকেই তাদের ধান ক্ষেতে কীটনাশক ছিটালেও তিনি তা ব্যবহার করেননি। এখন হযরত আলীর ধান কাটা পুরোপুরি শেষ। তিনি আশা প্রকাশ করেন প্রতি বারের মতো এবারও ভালো ফলন পাবেন।

উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুস্থির কুমার সরকার বলেন, কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া আইসিএম-আইপিএম পদ্ধতিতে যে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব কৃষক হযরত আলী তার মডেল এবং উদাহরণ। এ পদ্ধতিতে ফসল ফলানোর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন ঠিক থাকে তেমনি কৃষক অতিরিক্ত খরচ থেকে বাঁচতে পারে।