খাগড়াছড়িতে পাল্টা-পাল্টি মামলায় বিএনপির ২নেতা গ্রেফতার, ১৭নম্বর আসামি সাংবাদিক প্রফুল্ল
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার আওয়ামীলীগের পাল্টা মামলার জেরে জেলাতে রাতভর বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এ সময় বিএনপির ২নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত হচ্ছে-খাগড়াছড়ি পৌর বিএনপি’র ক্রীড়া ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক নেছার আলী ও ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস।
সোমবাব(২৯শে মে) রাতে তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার হয়। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক রতন কুমার ত্রিপুরা, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি নাসির সিকদার ও আমীর খানসহ একাধিক বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আরিফুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হবে। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়ার অভিযোগ, বিএনপির দায়েরকৃত মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পক্ষান্তরে আওয়ামীলীগের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
তিনি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, পুলিশি হয়রানি বন্ধ ও গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি দাবি করেন।
সাবেক সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’র সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভূইয়ার এপিএস, বাংলাভিশনের খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি এইচএম প্রফুল্ল। একই সাথে তিনি খাগড়াছড়ি টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও পার্বত্যনিউজের খাগড়াছড়ি ব্যুরো প্রধান। স¤প্রতি অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক সহিংসতায় দায়েরকৃত মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু এ মামলার তথ্য নেই খোদ খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরীর কাছে।
গত (২৬শে মে) খাগড়াছড়িতে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে আওয়ামীলীগের অফিসের সামনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। হামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজাসহ অন্তত: ৫জন আহত হন।
সেই গাড়ি হামলা ও ভাংচুরের জেরে খাগড়াছড়িতে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের পাল্টা-পাল্টি মামলা হয়েছে। মামলায় উভয় দলের প্রায় সাড়ে ৬শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান বাদী হয়ে সোমবার(২৯শে মে) দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএন আবছারসহ ১১০জনের নাম উল্লেখসহ আরো দেড় থেকে দুই শতাধিক অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ আনা হয়।
এ দিকে গত রোববার(২৮শে মে) দুপুরে খাগড়াছড়ি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ ওমর ফারুক সুজনের আদালতে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক রতন কুমার ত্রিপুরা বাদী হয়ে প্রথমে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেনকে প্রধান করে ১০৩জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত আড়াই শতাধিক আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরীকে হুকুমের আসামি করা হয়।
ঘটনার বিবরনে জানা গেছে, আওয়ামীলীগের দায়েরকৃত মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’র সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভূইয়ার এপিএস, সাংবাদিক এইচএম প্রফুল্লকে ১৭নম্বর আসামি করা হয়। মামলায় আসামি হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিক এইচএম প্রফুল্ল’ বলেন, “আমি” কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত নই। গত দুই যুগেও কেউ বলতে পারবে আমি কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে মিছিল, সমাবেশ কিংবা কোন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলাম।
তিনি বলেন, আমি স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বহুবার জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। কাজেই এমন মিথ্যা মামলায় ভীত নয়। এমন মিথ্যা মামলায় পুলিশ ফোন করলে নিজে হাজির হবো।
এদিকে খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সহিংসতায় জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় খাগড়াছড়ির পেশাজীবী সাংবাদিক ও খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার(৩০শে মে) খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব সভাপতি জীতেন বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মুহাম্মদ এক যুক্ত বিবৃতিতে স¤প্রতি খাগড়াছড়িতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘটিত সহিংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কর্মীর ন্যায় কর্মরত পেশাজীবী সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রবণতা খুবই দু:খজনক।
নেতৃবৃন্দ এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং একই সাথে এমন ঘৃণ্য তৎপরতা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিরত থাকার আহবান জানান।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির কাছে প্রশ্ন করা হয় সাংবাদিক এইচএম প্রফুল্ল তো কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত না, তাকে কেন মামলার আসামি করা হলো? জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
একই প্রশ্ন করা হলে খাগড়াছড়ি জেলা খাগড়াছড়ি জেলা আওয়াম লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, ঘটনার দিন(২৬শে মে) আমি অসুস্থ ছিলাম। সারা দিন বাসা থেকে বের হইনি। মামলার বিষয়টিও আমার জানা নেই।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। অপর দিকে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আরিফুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হবে। উপরে কথা বলে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৬শে মে খাগড়াছড়িতে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে আওয়ামীলীগের অফিসের সামনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। হামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজাসহ অন্তত: ৫জন আহত হন। এ ঘটনায় বিএনপি ও আওয়ামীলীগ পরস্পরকে দায়ী করে মামলা দায়ের করেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন