খাগড়াছড়ির জেলায় বিজ্ঞান মেলায় শ্রেষ্ঠ আয়োজক হিসেবে বেস্ট রামগড় ইউএনও

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে জেলা পর্যায় বিজ্ঞান মেলায় শ্রেষ্ঠ আয়োজক হিসেবে বেস্ট রামগড় ইউএনও মমতা আফরিন নির্বাচিত হয়েছেন। জেলার ৯(নয়)টি উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ প্রতিযোগীতা মূলক জেলা পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলায় শ্রেষ্ঠ আয়োজক হিসেবে বেস্ট ইউএনও নির্বাচিত হয়েছেন রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতা আফরিন।

বিজ্ঞান মেলা আয়োজক কর্তৃক জানা গেছে, ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে সমাপনী অনুষ্ঠানে জেলার ৯টি উপজেলা থেকে অংশগ্রহনকৃত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান প্রতিযোগীতা প্রকল্প প্রদর্শনী যাচাই-বাচাই হতে জেলা আয়োজক কমিটি রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতা আফরিনকে বিজ্ঞান মেলার শ্রেষ্ঠ আয়োজক হিসেবে বেস্ট ইউএনও নির্বাচন করেন।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকের আয়োজনে ও জাতীয় বিজ্ঞান প্রযুক্তি যাদুঘরের তত্বাবধানে “জ্ঞান-বিজ্ঞানে করবো জয়, সেরা হবো বিশ্বময়”এ শ্লোগানে জেলা অফিসার্স ক্লাব হলরুমে শুক্রবার ১৬ই মে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার প্রধান অতিথি থেকে পুরস্কার তুলে দেন।

এ তিনদিনব্যাপি এ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ স্বপ্নের প্রদর্শনী অংশ নেয়া বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের তৈরি করা নতুন নতুন প্রজেক্ট প্রদর্শন ও প্রজেক্ট সম্পর্কে উপস্থাপন করা হয়।

খাগড়ছড়ি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) ও ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ও মেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক রুমানা আক্তার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।

বিশেষ অতিথি জেলা পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফরিদ মিঞা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন, খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ পুলক বরণ চাকমা, প্রেস ক্লাব সভাপতি তরুণ কুমার ভট্টাচার্য।

এসময় খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ নারায়ণ চন্দ্র খাঁ, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো; আব্দুল বাতেন মৃধাসহ স্কুল-কলেজের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। আরো উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং গণমাধ্যমকর্মীরা।

অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা প্রদর্শিত প্রকল্পের ৯টি উপজেলা অংশ গ্রহনকারী ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষদের মাঝে পুরস্কার ক্রেস ও সনদ পত্র প্রদান হয়। অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত প্রজেক্টগুলো হচ্ছে-অর্থনৈতিক উন্নয়নে টিস্যু কালচার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, কৃষি বিদ্যুৎ, ল্যান্ড, এয়ার পলিওশন, উন্নত গ্রামীণ জীবনযাত্রা।

স্বপ্নের দীঘিনালা,পলিমেট হাউজ, বন্যা প্রতিরোধী ভাসমান খাদ্য গুদাম, নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে পরিবেশ বাঁচায়, গ্রাম বাঁচাই, প্রতিরক্ষা ও প্রগতি সহজর “স্মার্ট গার্ডিয়ান্স, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন দূষিত বায়ু পরিশোধন, দূষিত বায়ু পরিশোধনকারি অঞ্চেেল উন্নত সংস্করণ, ভূমিকম্প সহনশীল স্থাপনা, সেফটি রোড, এসো গ্রাম উন্নত করি, ইকো-ফ্রেন্ডলি খাগড়াছড়ি, রিসাইক্লিং ফ্যাক্টরি।

স্বপ্নের বাংলাদেশ, তৃষ্ণার্ত রাস্তা, পরিকল্পিত কৃষি ব্যবস্থা, পানছড়ি মডেল টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রকল্পে=রাবার ড্যাম উপর টারবাইন মটরে উৎপাদিত বিদ্যুৎ উপজেলাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা, প্লাস্টিক বর্জ্যরে পুনঃ ব্যবস্থাপনাসহ নানান ধরনের প্রজেক্ট।

এসব মডেল শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতাই নয়, ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা সমাধানের চিন্তাভাবনার প্রমাণ দেয়। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের নির্দিষ্ট চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা কিছু উদ্ভাবন মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।

পানছড়ি মডের টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অংশ গ্রহনকারী দশম শ্রেনী শিক্ষার্থী পাইশ্যেনু মারমা জানান, ‘এলাকায় ইন্টারনেট বা বিদ্যুৎ সবসময় পাওয়া যায় না, তাই আমরা এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেছি যা কম শক্তিতে চলবে।’ প্রাকৃতিকগত পানি স্রোত থেকে টারবাইন মটরের উৎপাদিত বিদ্যুৎ উপজেলার সব ইউনিয়ন বিদ্যুৎ চাহিদা মিটানো সম্ভব। লোশেডিং বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।

খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) রুমানা আক্তার বলেন,’তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে টিকে থাকতে হলে আমাদের নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করে বেশী সংখ্যক গড়ে তুলতে হবে। প্রতিবছরের তুলনায় এবছর ব্যাপক ছাড়া পেয়েছে।’

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘বর্তমান যুগের ছাত্র-ছাত্রীরা খুবই স্মার্ট এবং সৌভাগ্যবান যে, তারা আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যে সকল সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে বা পাওয়া উচিত সেগুলো তারা পাচ্ছে, আমাদের সময় এই সুযোগ সুবিধাগুলো পায়নি। খুদে বিজ্ঞানী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ খুবই চমৎকার হবে। এছাড়াও পড়াশোনার পাশাপাশি বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চর্চাও সমানভাবে করে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।’

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান চর্চার অলিম্পিয়াড নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা ও সেমিনারের মাধ্যমে যে আগ্রহ সৃষ্টি হলো, আমি মনে করি এটি তাদের দীর্ঘদিনের চর্চার মাধ্যমে বাস্তবতায় পরিনত করতে পেরেছে। “আমাদের নতুন প্রজন্ম দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। শুধু বইয়ের জ্ঞানে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব ও প্রযুক্তিনিভর শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্মনিভরশীল করে তুলতে হবে। এতে বেকারত্ব যেমন হ্রাস পাবে, তেমনি দেশের অগ্রগতিও ত্বরান্বিত হবে।”

আমাদের পার্বত্য খাগড়াছড়ি ৯টি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হলেও,আমাদেরকে যে বিজ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছে এবং নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। উদ্ভাবনী সৃষ্টি তারা যেন প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজের এবং সমাজের পরিবর্তন ঘটাতে পারে এমন টা প্রত্যাশা থাকবে।’
খাগড়াছড়িতে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ অনুষ্ঠান প্রমাণ করেছে, উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা আর সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে, সবচেয়ে দুর্গম জায়গা থেকেও নতুন দিগন্তের সূচনা সম্ভব বলে মনে করছেন আয়োজক কমিটির সংশ্লিষ্টরা।

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন মুগ্ধ করলো দর্শনার্থীদের অংশ গ্রহনকারী ছাত্র-ছাত্রী। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে অংশগ্রহণকারীদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও সৃজনশীলতা সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে এমন মন্তব্য করেছেন আয়োজক ও দর্শনার্থীরা।

উল্লেখ্য, ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ-২০২৫ জেলার ৯টি উপজেলার স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ১৪, ১৫ ও ১৬মে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞানমেলা পরিণত হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। গত বুধবার(১৪ মে) সকালে খাগড়াছড়ি অফিসার্স ক্লাবে বেলুন উড়িয়ে ও ফিতা কেটে সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়।

এই আয়োজনে জেলার ৯টি উপজেলা ১১টি বেশী স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। তারা নানা উদ্ভাবনী প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশ, প্রযুক্তি, কৃষি, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়। তিন দিনব্যাপী এ মেলা চলে ১৪,১৫, ১৬মে পর্যন্ত। গত শুক্রবার(১৬ই মে) দুপুরে জেলা শহরের অফিসার্স ক্লাব অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ মেলার তিনদিন ব্যাপী সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পাহাড় আর সবুজ প্রকৃতির শহর খাগড়াছড়ি এবার যেন রঙিন হয়ে উঠেছে জ্ঞানের আলোয়।