খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্মচারীদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পাচউবোতে বকেয়া বেতন ভাতা ও অবসরজনিত প্রাপ্য আর্থিক সুবিধাদি পাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে কর্মচারীদের দাবি আদায় কমিটির সদস্য সচিব দেব প্রসাদ ত্রিপুরা বলেন, কর্তৃপক্ষ পাওনা পরিশোধের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ২০১৭সালে ৩৫জনকে অবসর দিলেও বিগত ৬বছরে একটি টাকাও পরিশোধ করেননি। অবশিষ্ট ১৩জন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। কিন্তু তাদেরকেও বিগত ৫বছরে কোন বেতন ভাতা পরিশোধ করছেন না। তাই অভাবগ্রস্থ হয়ে হতাশায় ইতিমধ্যে ৩জন মারা গেছেন। বাকিরা মারা যাওয়ার উপক্রম।
বক্তারা আরো বলেন, কর্তৃপক্ষের মিথ্যাচার, প্রতারণামূলক আচরণ এবং অবহেলার শিকার হয়ে অমানবিক জীবন অতিবাহিত করছেন। ছেলে মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ১১ই সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ও ভাইস-চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরীর সাথে বৈঠকে নতুন প্রকল্পে যোগ্যতা অনুসারে নিয়োগের আশ্বাস ছাড়া তেমন কোন সমাধানের পথ মেলেনি।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অবসরগ্রাপ্ত সহকারি ব্যবস্থাপক আমিয় কান্তি রোয়াজা, বীর বিক্রম রোয়াজা, মাঠ তত্ত্বধায়ক জসিম উদ্দিন, প্রবীণ বরন চাকমা, ওভারসিয়ার বকুল বিকাশ চাকমা, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য যতিন বিকাশ চাকমা প্রমুখ।
এর আগের দিন খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন উঁচুভূমি বন্দোবস্তীকরন রাবার বাগান ব্যবস্থাপনা কমিটি নামীয় একটি শাখার কর্মকর্তা/ কর্মচারীরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার কারণে দীর্ঘ ৫বছরের বেশি সময় ধরে বেতন ভাতা না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপনের ফলে বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। তারা গত রোববার পুরো অফিস সময় খাগড়াছড়িস্থ নিজেদের কার্যালয়ের বারান্দায় বসে থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। যথাদ্রুত দাবী আদায় না হলে আরো কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরো জানান, আমরা না খেয়ে মরছি, অথচ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার কারণে এই জটিলতা সৃষ্টি হলেও তাদের মধ্যে কোন মাথাব্যাথা নাই।
এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা খাগড়াছড়িতে উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষুব্ধ কর্মচারীদের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, “তাদের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে । আশা করছি সফল হবো।”
প্রতিষ্ঠানটির ভারগ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার পিন্টু চাকমা জানান, “বেতন ভাতা পাচ্ছেন না এটা সঠিক। সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানিয়েছি।
উল্লেখ্য, পার্বত্য অঞ্চলের একমাত্র এই রাবার শিল্প প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন অজুহাতে এখন ধ্বংসের পথে। বিগত ২০১৭খ্রিস্টাব্দে ৩৫ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে কৌশলে অবসরে পাঠালেও ৬বছরে কোন পাওনা পরিশোধ করেনি। বর্তমানে কর্মরত ১৩জন কর্মকর্তা/কর্মচারী বছরের পর বছর বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও উল্লেখযোগ্য কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে কর্মচারীদের পাশাপাশি শিল্প প্রতিষ্ঠানটির উপর নির্ভরশীল ২৩০০টি উপকারভোগী পরিবারের ১৫হাজারেরও বেশী লোকজন অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। কয়েক বছর আগেও পার্বত্য অঞ্চলের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এই রাবার শিল্প প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচানোর জন্য সরকারের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন অভিজ্ঞমহল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন