খাগড়াছড়িতে বিএনপির সড়ক অবরোধে দুর্ভোগে সাজেকগামী পর্যটকরা

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বিএনপির সভাপতি, গডফাদার খ্যাত ত্রাস সুষ্টিকারী ও সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূঁইয়ার বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ এনে পাহাড়ে অপরাজনীতির কৌশল হিসেবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে ডাকা সকাল-সন্ধ্যা অবরোধে দুর্ভোগে পড়েছেন সাজেকগামী পর্যটকরা।
মংগলবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ি জুড়ে বিএনপির ডাকে অবরোধ শুরু হয়। তবে স্থানীয় ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় সকাল থেকেই জেলা জুড়ে মাঠে সরগরম রয়েছে প্রশাসন। এতে করে অবরোধে এখনো অবধি জেলার কোথাও কোন নাশকতার সুযোগ পায়নি বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
যদিও জেলাসদরসহ জেলার আভ্যন্তরীন রুট গুলোতে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে।
নৈশ কোচ ঢাকা থেকে আসা সাজেক গামী পর্যটকরা জানান, বিএনপির ডাকা অবরোধের কথা না জানিয়ে খাগড়াছড়ি নামার পর চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। তারা যে হোটেল বুক করেছে, সেই টাকাও গচ্ছা গেছে।
পর্যটকরা জানান, তারা আগে থেকে জানতেন না, এই জেলায় অবরোধ আছে। সকালে এসে গাড়ি থেকে নামার পর জানতে পারেন মংগলবার(০৭-০৬-২২) সকাল ৬টা থেকে বিএনপির অবরোধ। এখন তারা সাজেক যেতে পারছেন না। হোটেল বুক করা হয়েছে। যদি যেতে না পারেন তাহলে তাদের অনেক ক্ষতি হবে। ঘুরতে আসার মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
কয়েকজন জানান, তারা গতকাল রাতে ঢাকা থেকে সাজেকের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আগে জানা ছিল না এখানে অবরোধ। এখন এসে বিপদে পড়ে গেছেন। এদিকে হোটেলও বুক করা রয়েছে। সাজেক যেতে না পারলে তারা বুকিংয়ের টাকাও ফেরত পাবেন না।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মো: ইসমাইল জানান, আমরা আসলেই জানতাম না, খাগড়াছড়িতে আজকে বিএনপির হরতাল ও অবরোধ আছে। আমাদেরকে কাউন্টার থেকেও বলা হয়নি রাতে গাড়িতে উঠার সময়। আজ ভোরে আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে ড্রাইভাররা আমাদেরকে বলেন আজ অবরোধ। আমাদের গাড়ি আর কোথাও যাবেনা। এরপর থেকে আমরা বিপাকে পড়ি। আমরা এখন গাড়ি পাচ্ছিনা, আমরা এখন খুবই দুর্ভোগের মধ্যে আছি। আমাদের টিমে ৪০জনের অধিক এখন রাস্তার পাশে বসে বসে বিরক্তিকর সময় পার করতে হচ্ছে। আর আমাদের বিভিন্ন কাজকর্ম থাকার কারণে পূর্ব থেকে অফিস থেকে ৩দিনের ছুটি নিয়ে সাজেকে অবস্থান করার জন্য অগ্রিম পেমেন্ট দিয়ে হোটেল/কটেজ বুকিং করে রেখেছিলাম। যদি আমরা আজ সাজেকে যেতে না পারি, তাহলে আমাদের অনেক লোকসান গুণতে হবে।
আরিফ হোসেন নামে এক পর্যটক জানান, আমরা ৫জন রাতে ঢাকা থেকে সাজেকে যাওয়ার জন্য খাগড়াছড়িতে আসি। ভোর ৪টায় আমরা এ শাপলা চত্বরে এসে পৌঁছায়। গাড়ি থেকে নামার পরে আমরা জানতে পারি যে, আজ বিএনপির হরতাল-অবরোধ ছিল। আমরা আগে থেকে এ ব্যাপারে জানলে আমাদেরকে এমন দুর্ভোগে পড়তে হতোনা। এখন আমাদেরকে কোন যানবাহন নিতে চাচ্ছেনা। আমরা এখন অনেক বিপাকে পড়েছি।
সাজেক কাউন্টারের লাইনম্যান মো: আরিফ জানান, বিএনপির ডাকা অবরোধে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই সাজেকের উদ্দেশে কোনো গাড়ি যাচ্ছে না। পর্যটকরা দুর্ভোগে পড়েছে। যদি প্রশাসন থেকে কোনো সহযোগিতা পাই, তাহলে গাড়ি ছাড়ব।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মুহাম্মদ রশিদ জানান, অবরোধ চলাকালে যেন কোনো ধরনের অনাকংখিত দুর্ঘটনা না ঘটে, সেদিকে তৎপর রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। কোনো ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে আইনী ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে, জেলাজুড়ে অপরাজনীতির কৌশল হিসেবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে ডাকা সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ প্রতিরোধ ও জনসাধারণের জান-মাল রক্ষায় মাঠে রয়েছে আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক মংসুইপ্রæু চৌধুরী ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কে.এম ইসমাইল হোসেন বলেন, ৭ই জুন বিএনপি দিনব্যাপী অবরোধ ডেকেছে। আমরা এই হরতাল-অবরোধ কোনভাবে সফল হতে দেবোনা। এদেশের মানুষের জান-মাল রক্ষায় আমরা সবসময় প্রস্তুুত আছি। আমরা শান্তি-সমৃদ্ধিকে বিশ্বাস করি। যেকোন ধরনের নাশকতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। যেখানে নৈরাজ্য ও নাশকতা সৃষ্টি হবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। এ সময় বক্তারা বিএনপির সকল নৈরাজ্য প্রতিরোধে প্রস্তুুত রেখে প্রতিহত করার আহŸান জানান।
প্রসঙ্গত, খাগড়াছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়াকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, বাড়ি-গাড়ি ভাঙচুর, নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধের ডাক দেয় জেলা বিএনপি।