“ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করা জরুরী”
খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলাতে “ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করা জরুরী” শীর্ষক আলোচনা সভা করেছে পানছড়ি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটি। শুক্রবার (৩ মার্চ) পানছড়ি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩শতাধিক লোক অংশগ্রহন করেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পানছড়ি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমা। কমিটির সদস্য সচিব অনীল চন্দ্র চাকমার সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন ২নং চেঙ্গী ইউনিয়ন সাবেক চেয়ারম্যান কালাচাঁদ চাকমা, ১নং লোগাং ইউনিয়ন সাবেক চেয়ারম্যান সমর বিকাশ চাকমা, পানছড়ি উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান মনিতা ত্রিপুরা, ১নং লোগাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়কুমার চাকমা, ৩নং পানছড়ি সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান উচিত মনি চাকমা ও পানছড়ি উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান চন্দ্রদেব চাকমা প্রমুখ।
সভায় কালাচাঁদ চাকমা বলেন, আমরা ৮২-৮৩সালের সাম্প্রদায়িক হামলা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ বা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত দেখেছি। সে সময় অনেক নেতাকর্মীকে আমরা হারিয়েছি। সেই ৮২-৮৩সালের সংঘাত বন্ধ হওয়ার পর ১৯৯৭সালের চুক্তির পরে পানছড়িতে প্রদীপলাল এবং কুসুমপ্রিয় চাকমাকে হত্যার মধ্য দিয়ে নতুন করে আরো সংঘাত শুরু হয়। এরপর থেকে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের ভয়াবহতা আমরা দেখছি।
তিনি পিসিজেএসএস সভাপতি সন্তুলারমা এবং ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসাসহ উভয় দলের সকল নেতাকর্মীদের প্রতি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে ২০১৫সালে ইউপিডিএফ ও পিসিজেএসএস’র মধ্যেকার হওয়া সমঝোতা চুক্তি মেনে চলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার জন্য আহŸান জানান। মনি চাকমা বলেন, একটি জাতি ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি মারামারি সংঘাত করে কোনকিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। যদি সকলের দাবি জাতির শান্তি জন্য হয় তাহলে সংঘাত হওয়া কথা নয়। আমরা যারা উপস্থিত হয়েছি সকলে পিসিজেএসএস এবং ইউপিডিএফের কাছে গিয়ে সংঘাত বন্ধের অনুরোধ জানাবো।
মনিতা ত্রিপুরা বলেন, সংঘাত বন্ধে অনুরোধ করার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে পারবো না যদি আপনারা সহযোগিতা না করেন। সে জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি উভয় সংগঠনের নেতা কর্মীদের ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের জোর দাবি জানান।
জয় কুমার চাকমা বলেন, মত ভিন্ন হলেও লক্ষ্যে উদ্দেশ্য যদি এক হয় আমরা কেন এক হতে পারবো না। আমরা পার্টি নেতাদের বলব দেশ জাত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাই সংঘাত বন্ধ করুন। আমরা সকলে অনুরোধ করলে তারা অবশ্যই আমাদের কথা শুনতে বাধ্য হবে। আমাদের সকলে মিলে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে শান্তি মিছিল করা দরকার এবং করতে হবে। যদি আমরা তা করতে পারি তাহলে সংঘাত অতিদ্রুুত বন্ধ হবে। এই সময় সংঘাত করার সময় নয়, এই সময় আন্দোলন করার সময় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চন্দ্রদেব চাকমা বলেন, আমরা যারা জুম্মজাতি অনেক অনেক বছর আগে থেকে দুঃখ কষ্ট ভোগ করে আসছি, কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম না এবং ঐক্যবদ্ধ নয়। বর্তমান সময়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করা জররিী। পানছড়িতে একটি ভ্রতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটি রয়েছে। যদি এই কমিটি সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে তাহলে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের কাজ এগিয়ে নিতে পারবো।
সমর বিকাশ চাকমা বলেন, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত মানে ধ্বংস, সংঘাত একটি কালো ছায়া। তিনি বলেন পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত একটি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র এটা সকলকে বুঝতে হবে। তিনি এই ধরনের আলোচনা সদর এলাকায় করার পরামর্শ দেন।
আলোচনা সভার সভাপতি শান্তিজীবন চাকমা বলেন, ২০২০সালে পানছড়ি ভ্রতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে আমরা পিসিজেএসএস এর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে কথা বলতে ছেয়েছিলাম এবং দু’য়েকজনের সাথে কথা হলেও তারা তেমন কিছু বলতে পারেননি। যা হোক, আমরা তারপরেও চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সহযোগীতা করতে হবে।
তিনি সভায় উপস্থিতি লোকজনের উদ্দেশ্যে বলেন, এই আলোচনা সভায় উপস্থিত কারোর যদি পিসিজেএসএস এর কোন শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীর সাথে যোগাযোগ থাকে তাহলে তাদেরকে বলবেন তাদের সাথে আলোচনা করার জন্য কোথায় যেতে হবে আমি শান্তিজীবন চাকমা এবং পানছড়ি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটি যেখানে যেতে বলা হবে সেখানে যেতে আমরা প্রস্তুুত রয়েছি। সেটা ভারতে হোক, মারিশ্যা হোক কিংবা রাঙামাটি হোক।
সভায় পানছড়ি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটির একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সভাপতি শান্তিজীবন চাকমা।
সভা থেকে অবিলম্বে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে পিসিজেএসএস-ইউপিডিএফসহ সকল দলের প্রতি আহববান জানানো হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন