খালেদাকে নিয়ে বায়োস্কোপ হয়েছে : রিজভী

দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে এনে রোগ পরীক্ষার নামে টানাহেঁচড়া, হেনস্থা ও ‘বায়োস্কোপ’ করার অভিযোগ এনেছে বিএনপি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে এক্সরে করিয়ে কারাগারে নেয়ার পর দলের মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই প্রতিক্রিয়ার কথা জানান।

শনিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার পর দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন রিজভী।

গত ২৮ মার্চ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির না করার পর তার শারীরিক অসুস্থতার কথা শোনা যায়। পরদিন কারাগারে বিএনপি নেত্রীর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ঢাকার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনসহ তিন জন চিকিৎসক।

এরপর ১ এপ্রিল খালেদা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার জন চিকিৎসককে দিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।

এই বোর্ড কারাগারে গিয়েই বিএনপি নেত্রীর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। আর তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আজ বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে করা হয় এক্সরে।

রিজভীর অভিযোগ, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে এসে ‘টানাহেঁচড়া করা হয়েছে’ শুধুমাত্র হেনস্থা ও হয়রানি করার জন্য।

‘দেশনেত্রীর গাড়ি হাসপাতালে এসে পৌঁছলে তাকে একরকম টানাহেঁচড়া করে উপরে উঠানো হয়। গাড়ি থেকে নামার জন্য সিঁড়ি পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে হাসপাতালে ধাক্কাধাক্কির মতো পরিস্থিতিতে একরকম অপমানজনকভাবে তাঁকে হাসপাতালে ওঠা-নামা করানো হয়েছে।’

‘খালেদাকে এক রকম একরকম জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে আনা হয়েছে’ অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘কারাগারে তার কক্ষের কাছে গিয়ে বারবার তাগিদ দিতে থাকে কর্মকর্তাসহ ৭/৮ জন কারারক্ষী।’

‘একজন মুসলিম ধর্মপ্রাণ নারী হিসেবে ৩০-৩২ বছর ধরে তিনি শাড়ির উপরে চাদর অথবা ওড়না পরিধান করেন। এ সরকার এত হীন এবং কুৎসিৎ মনোবৃত্তির যে একজন বয়স্কা নারী যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাকে চাদর অথবা ওড়না পরিধান করার সুযোগও পর্যন্ত দেয়নি।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকার ছিনিমিনি খেলছে এমন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘এ ছিনিমিনি খেলা বন্ধ না করলে কোটি কণ্ঠের হুঙ্কারে এ সরকারের গদিকে উল্টে দিতে জনগণ পিছপা হবে না।’

‘সুচিকিৎসার অভাবে দেশনেত্রীর কোনও ক্ষতি হলে এর চরম দায় সরকারকেই নিতে হবে।’

নিজেদের ‘সাধু’ প্রমাণের জন্য সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নামে নাটক করছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আওয়ামী রাজত্বের ছাইপাঁশের সঙ্গে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, সেবা বিভাগকে বলপূর্বক হরণের ধারায় বেঁধে ফেলা হয়েছে বলেই সরকারি হাসপাতালে বিরোধী দলের সেবা পাওয়ার আর কোনও সুযোগ নেই।’

‘বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তার চিকিৎসা বিষয়ে সরকার আজ যে বায়েস্কোপ দেখালো তা নিন্দা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’

রিজভীর দাবি, একজন বন্দি আগে যেসব চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতেন কারাগারেও তাকে সেসব চিকিৎসকদের চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তাকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি।

অবশ্য যদিও বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের পরিচালক আব্দল্লাহ আল হারুন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার পছন্দের তিন জন চিকিৎসক তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গে কারাগারের চিকিৎসকও ছিলেন।

হারুন বলেন, ‘খালেদা জিয়া যেসব চিকিৎসকে রাখার জন্য বলেছিলেন তারা হলেন- ডা. মামুন, ডা. এফ এম সিদ্দিকী, ডা. ওয়াহিদুর রহমান।…কারাগারের চিকিৎসক ডা. শুভও ছিলেন।’

রিজভী বলেন, ‘বেগম জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে গেলে সেখানে পরিবারের সদস্যদের পর্যন্ত দেখা করতে দেয়া হয়নি।’

অবশ্য বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানের সঙ্গে বিএনপি নেত্রীর সাক্ষাৎ হয়েছে হাসপাতালে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, আব্দুল কুদ্দুস, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ও টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফা প্রমুখ।