খালেদার ‘ভিশন-২০৩০’-এ যা থাকছে

নতুন ধারার রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিকেলে ভিশন-২০৩০ নিয়ে আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কূটনীতিকসহ পেশাজীবীদের পরামর্শেই এমন রূপরেখা ঘোষণা করছে দলটি। রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের ভবিষ্যৎ মুলনীতির এই বিষয়বস্তু অনুমোদনও দিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সোমবার (৮ মে) রাতে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এ বৈঠক হয়।

সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সংসদকে উচ্চ ও নিম্ন কক্ষের পরিকল্পনার কথা জানাবেন বিএনপি প্রধান। গণতন্ত্র চর্চায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ দুটি দেশ যুক্তরাজ্য ও ভারতেও দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। সেগুলোর আলোকেই এ পরিকল্পনা নিয়েছেন বিএনপির বুদ্ধিজীবীরা। দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রসঙ্গে খসড়া ভিশনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের এককেন্দ্রী চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সম্প্রদায়, প্রান্তিক গোষ্ঠী ও পেশার জ্ঞানীগুণী ও মেধাবী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা হ্রাস করার পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার পরিকল্পনাও তুলে ধরবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য করতে ভিশনে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। এর অবসানকল্পে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার ও এর জন্য বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ‘ডবল ডিজিটে’ উন্নীত করার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সাংবিধানিক পদে নিয়োগে যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে আমূল সংস্কার আনা হবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জনগণের সম্মতি গ্রহণের পন্থা ‘রেফারেন্ডাম’ বা ‘গণভোট’ ব্যবস্থা সংবিধানে পুনঃপ্রবর্তন করার ঘোষণা দেবেন খালেদা জিয়া। দুর্নীতির সঙ্গে কোনো আপস নয় এমন প্রতিশ্রুতিও থাকবে ভিশন-২০৩০ এ।

রাজধানীর হোটেল দ্য ওয়েস্টিনে বিকেল সাড়ে ৪টায় আগামীকাল বুধবার (১০ মে) এই সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা। সেখানে জাতীয় পার্টিসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, বিশিষ্টজনসহ গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানালেও তারা তা গ্রহণ করেনি।

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে গেলে কী কী কাজ করব, ২০৩০ সালে আমরা কেমন দেশ দেখতে চাই, সেই স্বপ্নটা কীভাবে জাতিকে দেখাতে চাই— এ বিষয়গুলোই তুলে ধরবেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আমাদের জাতীয় কাউন্সিলেও চেয়ারপারসনের বক্তব্যে ‘ভিশন-২০৩০’ এর রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল, সেটা ছিল আউটলাইন। এখন পূর্ণাঙ্গ করে দেওয়া হবে। তবে এটার সঙ্গে নির্বাচনী ইশতেহার বা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখার কোনো সম্পর্ক নেই।’

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত নন, এমন কয়েকজন বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও আমলার নেতৃত্বে ‘ভিশন-২০৩০’ শীর্ষক রূপরেখার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এরপর তা খালেদা জিয়াকে দেখানো হয়। গত এক বছর ধরে তারা এ কাজ করে যাচ্ছেন। সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে তা অনুমোদন দেওয়া হয়।

ভিশন-২০৩০-তে বিএনপি চেয়ারপারসন নতুন ধারার রাজনীতি ও সরকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেবেন। ভিশনে বলা হয়, সুশাসন প্রসঙ্গে তিনটি ‘গুড’ বা ‘সু’ অর্থাৎ থ্রিজির সমন্বয় ঘটানো হবে। এই থ্রিজি হলো : গুড পলিসি, গুড গভর্ন্যান্স ও গুড গভর্নমেন্ট। অর্থাৎ সুনীতি, সুশাসন ও সু-সরকার। গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো সাংবিধানিক ও আধাসাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও দলীয়করণমুক্ত করার কথা বলা হবে।

প্রশাসনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে ভিশনে উল্লেখ করা হয়, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করে সততা, দক্ষতা, মেধা, যোগ্যতা, দেশপ্রেম ও বিচার ক্ষমতাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসন, পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার কথা বলা হবে। সব কালা কানুন বাতিল করা হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং আটক অবস্থায় দৈহিক-মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। আটকাবস্থায় মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার জন্য তদন্তের ব্যবস্থা থাকবে। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের যোগ্যতা ও পদ্ধতিসংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবে বিএনপি।

ভবিষ্যতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে কঠোরতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে দলটি। বিএনপি মনে করে, সন্ত্রাসবাদ সব রাষ্ট্রের জন্যই হুমকির কারণ। এ কারণে বিএনপি বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো রকম সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা বরদাস্ত করবে না। বাংলাদেশের মাটি থেকে অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাও মেনে নেবে না।