খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্ত করাই এখন ‘এক নম্বর জরুরি কাজ’

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্ত করাই এখন ‘এক নম্বর জরুরি কাজ’ বলে দলের নেতা-কর্মীদের জানালেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সাজার কার্যকারিতা স্থগিতের মেয়াদ বাড়িয়ে খালেদা জিয়াকে আরও ছয় মাস মুক্ত রাখতে সরকারের নির্বাহী আদেশের প্রজ্ঞাপন জারির পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল একথা জানান।

ফখরুল বলেন, “আজকে আমার কাছে যা মনে হয়, বড় একটা সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই যে গৃহঅন্তরীণ হয়ে থাকা। সে গণতন্ত্রের নেত্রী, দীর্ঘকাল তিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাকে বের করে আনাটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। এটা এক নাম্বার কাজ।”

দণ্ড নিয়ে বিদেশে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আসা বিএনপির ‘দুই নম্বর জরুরি কাজ’ বলে জানান দলটির মহাসচিব।

“দুই নাম্বার হচ্ছে, আমাদের যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যিনি বিদেশে আছেন, তার বাংলাদেশে ফিরে আসা গণতন্ত্রের জন্যে বেশি প্রয়োজন। এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা সেগুলোকে দূর করা।”

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (বিএনআরসি) উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ফখরুল।

দেশে গণতন্ত্র ‘ফিরিয়ে আনার জন্য’ জাতীয় ঐক্য গড়ে গণআন্দোলন সৃষ্টি করা গেলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানো যাবে বলে মনে করেন ফখরুল।

সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আজকে সারা পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ধবংস করে দিয়ে একটি গোষ্ঠির স্বার্থ চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

“আজকে বাংলাদেশে মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোটের অধিকার হরণ, সংবাদপত্র-মত-ব্যক্তির স্বাধীনতা সব কিছু হরণ করা হয়েছে। আজকে বাংলাদেশে জনগণ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না। এদেশে এখন আওয়ামী লীগ ও তার ‍সুবিধাভোগী শ্রেণির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই সরকারের গণতন্ত্রের সব কিছুকে হরণ করেছে।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণ ও সব গণতান্ত্রিক দলের ‘ইস্পাত কঠিন ঐক্য’ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “বেগম জিয়াকে মুক্ত করলে গণতন্ত্রের মুক্তি আসবে। কিন্তু সেই জন্য আমাদেরকে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে, কী করে আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাস্তায় নামতে পারব। আন্দোলন ছাড়া আমাদের অন্য কোনো বিকল্প আছে বলে আমরা নিশ্চিত।”

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, “দেশে সমস্ত কিছু একজনের হাতে, একটা গোষ্ঠির হাতে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন পুনরুদ্ধার করার প্রয়োজনে গণবিস্ফোরণ ঘটাতে হবে।”

বিরোধী রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতা ও অনৈক্যের কারণে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন রব।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “এখন বাংলাদেশে অনুবীক্ষণ কিংবা দুরবীক্ষণ, কোনটা দিয়েই গণতন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

“পরিকল্পনা এখন যা হয়, পরীর মতো উড়াল দিয়ে একদল লোক অর্থ সম্পদ নিয়ে মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি জায়গায় পাড়ি দিচ্ছে আর জনগণ কল্পনার ধুলাবালিতে হামাগুঁড়ি খাচ্ছে। আমলাতন্ত্র কামলাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশ আইনভঙ্গকারী বাহিনীর খেতাব লাভ করেছে।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐক্যমত হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

বিএনআরসির পরিচালক জহিরউদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় এই সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও বক্তব্য রাখেন।

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মির্জা ফখরুলের বাণী

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা বর্তমানে এক ভয়াবহ দুর্দিন অতিক্রম করছি। ভিন্নমতের কারণে অনেকেই গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বছরের পর বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, এখনও তিনি পুরোপুরি মুক্ত নন।

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের গণতন্ত্রমনা মানুষকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

জাতিসংঘ কর্তৃক ২০০৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে গণতন্ত্রের সারবত্তা ও অনুশীলনে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা, আহতদের জানাচ্ছি সমবেদনা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যেখানে জনগণ সরাসরি শাসন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারে।

জনগণের মতামতই হয় সরকার পরিচালনার ভিত্তি। কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আসুন, আমরা বর্তমান দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে গণতন্ত্রের মুক্তির মাধ্যমে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলি।