গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পান নিয়ে বিপাকে গাইবান্ধার চাষিরা

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গাইবান্ধাসহ সারা দেশে চলছে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন। দ্বিতীয় ধাপের কঠোর লকডাউনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে মানুষের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ থাকায় জেলায় বন্ধ রয়েছে শপিংমল-মার্কেটসহ সব দোকানপাট। এছাড়া বন্ধ রয়েছে গণপিরবহন। ফলে পাইকার আসতে না পারায় পান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। ক্রেতা না থাকায় খানিকটা কম দামে পান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

উত্তরের জেলা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পান চাষের জন্য বিখ্যাত। এ এলাকার চন্ডিপুর, কঞ্চিবাড়ি, শান্তিরাম, বামনডাঙ্গা, তারাপুর, সর্বানন্দ, রামজীবন ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকাজুড়ে পানের বরজ গড়ে উঠেছে। এসব এলাকার প্রায় দুইশ’ হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে পানের বরজ। দেখতে ও স্বাদে ভালো হওয়ায় এই পানের চাহিদা বেশি। তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে এখানকার পান। স্থানীয় হাটগুলোতে বিক্রির জন্য পান নিয়ে যান চাষিরা। আবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররাও আসেন পান কিনতে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জেলার বাহিরে পান বাজারজাত করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন তারা।

চাষিরা জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি মৌসুমে পানের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে বিক্রি কমে যাওয়ায় এবং গাছ থেকে পান তুলতে না পারায় গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত পানে ভরে গেছে বরজ। গণপরিবাহন বন্ধ থাকায় পাইকারদের কাছে পান বিক্রি করতে না পারায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

শান্তিরাম ইউনিয়নের পান চাষি বেলাল মিয়া বলেন, ‘অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অনেকে এখন পান চাষ করছেন। গত ৮ বছর ধরে ২০ শতক জমিতে পানের বরজ দিয়ে পান চাষাবাদ করছি। প্রতিবছর খচর বাদ দিয়ে এখান থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করছি। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে সংকটে রয়েছি।’

কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়নের পান চাষি রিয়াজুদ্দিন বলেন, ‘লকডাউনের কারণে হাটবাজারে যেতেও পারছি না। আবার পান বিক্রিও করতে পারছি না। কিছুদিন আগে যে পান বিক্রি হতো পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার পোয়া (৪০ বিরা), এখন সেই পানের দাম নেমে এসেছে আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। এতে করে উৎপাদন খরচই উঠছে না।’

কালিতলা বাজারের পান-সুপারির দোকানদার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারনে পানের দোকান বন্ধ থাকায় পান কেনা আপাতত বন্ধ রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে বাইরের পাইকাররা আসতে পারছেন না। ফলে এখানে পানের চাহিদা কম, দামও কম।’

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম ফরিদুল হক বলেন, ‘উৎপাদন খরচ কম ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় পানের আবাদ দিন দিন বাড়ছে। পান চাষে এখন অনেকে আগ্রহী হয়ে উঠছে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় পানের ফলনও ভাল হয়েছে।’