গভর্নরের কাছে ‘প্রটেকশন’ চাইলেন ব্যাংক মালিকরা

কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা ও মালিকানায় পরিবর্তন আসার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে ‘প্রটেকশন’ বা নিরাপত্তা চেয়েছেন ব্যাংক মালিকরা।

বুধবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে এক বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই হস্তক্ষেপ দাবি করেন বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স-এবিবির নেতারা।

আড়াই ঘণ্টার এই বৈঠকে গভর্নরও ব্যাংকারদেরকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে এই নির্দেশনার বিষয়ে কোনো পক্ষই সাংবাদিকদেরকে কিছু জানায়নি।

বিকাল তিনটা থেকে শুরু করে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দুই পক্ষের বৈঠক হয়। আর বৈঠক শেষে এবিবি পক্ষ থেকে এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান কথা বলেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। তবে গভর্নর বা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাননি।

এবিবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকারদের বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কী কী প্রটেকশন দেয়া যায় সেটার একটা অল্টারনেটিভ (বিকল্প) উপায় খুঁজতে হবে। তবে তা অবশ্যই সময় নিয়ে গুছিয়ে সুন্দরভাবে করা উচিত। এ সব বিষয়ে আমরা গভর্নরকে জানিয়েছি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তাও চেয়েছি।’

২০১৭ সালে পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আসে। চট্টগ্রামের একটি বড় শিল্পগ্রুপ এই দুটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এসেছে।

একই ধরনের পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে ইসলামী ঘরনার আরেক ব্যাংক শাহজালালেও। পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আর প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক এবি ব্যাংকেও চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের তিনজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। যদিও এই ব্যাংকে তাদের বদলে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা ব্যাংকের মালিকপক্ষেরই লোক।

তবে এর বাইরেও ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়াসহ কয়েকটি ব্যাংকের পরিবর্তনের গুঞ্জন আছে। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদরাও নানা সময় সমালোচনা করেছেন। অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান এভাবে ব্যাংকের মালিকানা বা পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের চেষ্টাকে চর দখলের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

আবার চট্টগ্রামভিত্তিক যে শিল্পগ্রুপ পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে ব্যাংকের মালিকানায় আসতে চাইছে তাদের অর্থের উৎস খোঁজার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকে মালিকানা (পরিচালনা পর্ষদ) এবং ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন হচ্ছে। এতে ব্যাংকের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে, বিষয়টি নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। এর ফলে আমাদের গ্রাহকরাও ব্যাংকের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে।’

গভর্নরের সঙ্গে আর কোনো বিষয়ে কথা হয়েছে-জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকে আইনের মাধ্যমে কী কী পরিবর্তন আনা যায় এ বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এখানে অনেক ধরনের ঘটনা হচ্ছে।’

ব্যাংকার্স ক্লাব খোলার জন্যও গভর্নরের সাথে এবিবির দায়িত্বপ্রাপ্তরা পরামর্শ করেন বলে জানান মাহবুবুর রহমান।

জনতা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম বলেন, ‘গভর্নর আমাদেরকে নতুন বছরে কীভাবে ব্যাংক পরিচালনা করব, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।’ তবে এই নির্দেশনা কী, সে বিষয়ে কিছু বলেননি এই ব্যাংক কর্মকর্তা।