গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হলেন বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান। তাঁর বয়স ৬৫ বছর। তার মেয়ে মালেকা বেগম (৪৫)। তার ছেলে মাহফুজার রহমান (২৫)। মাহফুজারের ছেলে কাওসার (৫) এ বছর প্রথম শ্রেণিতে হয়েছে। শৈশব কালে আব্দুল মান্নানের লেখাপড়ার সুযোগ মেলেনি। শেষমেষ বৃদ্ধ বয়সে শিক্ষা গ্রহণের নিমিত্তে তার নাতির ছেলে কাওছারের সাথে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন প্রথম শ্রেণিতে।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ওয়ানের শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে শ্রেণি কক্ষের বেে বসে পাঠ্যবই পড়ছিলেন। প্রতিনিয়ত এভাবে বিদ্যালয়ে গিয়ে বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান শিক্ষা জীবন শুরু করছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়বাড়ী গ্রামের মৃত তছিল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মান্নান (৬৫)। তার পৈত্রিক নিবাস ছিল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শ্রীমুখপাড়ায়। ওখানকার বাড়ীভিটা ছেড়ে স্বপরিবারে এখন কাশিয়াবাড়ী গ্রামে বসবাস করছেন। শিশু বয়সে অভাব-অনাটনের কারণে তিনি শিক্ষাগ্রহণ করতে পারেনি। তারপর যুবক বয়সে বিয়ের পর হতে সংসারের হাল ধরতে হয়। সংসার চালাতে জীবিকা নির্বাহে দিনমজুরের কাজ করতেন। বর্তমানে কাশিয়াবাড়ী বাজারে একটি খিলিপানের দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছে। খিলিপানের দোকানই তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল।

আব্দুল মান্নানের ২ মেয়ে মালেকা বেগম, জান্নাতী বেগম ও এক ছেলে মমিরুল ইসলাম রয়েছে। মেয়ে দুইজনকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় মেয়ে মালেকা বেগমের ছেলে মাহফুজার রহমানকে বিয়ে করানোর পর এখন তিনি পুতির মুখও দেখছেন। ওই পুতি কাওছার রহমান (৫) এ বছর কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। পুতির সঙ্গে একই বিদ্যালয়ে আব্দুল মান্নান পড়ালেখা শিখতে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছেন। ক্লাসে তার ভর্তি রোল নং-৩৭। মান্নান বৃদ্ধ হলেও এখনও মনোবল হারায়নি। তিনি নিয়মিত পাঠ্যবই ছাড়াও খাতা-কলম নিয়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে মনোযোগ সহকারে ক্লাসও করছেন। বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান বলেন, অতীতের অনেক কাহিনী রয়েছে যা বললে আমার চোখে পানি আসে। অনেক দুঃখ-কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছি। এখন বৃদ্ধ বয়সে তেমন কাজকর্ম করতে পাই না। বাপ-মা যখন বেঁচে থাকা কালে অভাব-অনাটনে কারণে বিদ্যালয়ে যেতে পারি নাই। এখন একটি খিলিপানের দোকান দিয়েছি। দোকানে অনেক সময় বাকি যায়। বাকি টাকা মানুষ দিলে তা সবসময় মনে রাখতে পারিনা। তাই খাতায় লিখে রাখতে পারি না। এ জন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। বিদ্যালয়ের স্যারেরা অনেক ভালোভাবে আমাকে পড়ালেখা শেখাচ্ছেন।

তিনি এখন বিদ্যালয়ে গেলে দোকানটি দিনব্যাপী বন্ধ থাকে। তবে বিকেল বেলা হতে সন্ধা পর্যন্ত দোকানে বসে খিলিপান বিক্রি করে যেটুকু আয় হয় তা দিয়ে কোনমতে সংসার চালায়। এ বিষয়ে কেউ যদি আমাকে সহযোগিতা করতো। তাহলে আমি উপকৃত হতাম।

কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান মন্ডল মিথুন জানান, আব্দুল মান্নান মিয়া বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন থেকে অনুরোধ করে আসছিলেন। তার অনুরোধে নতুন বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করে নেয়া হয়েছে। উনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে এসে শিশু-শিক্ষার্থীদের সাথে মনোযোগ সহকারে ক্লাসে পড়ালেখা করছেন। এছাড়াও ওনার আচার ব্যবহার খুবই ভালো। ওনার ক্লাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ওনাকে পেয়ে আনন্দের সাথে পড়ালেখা করছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান নয়ন-এর এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান যেহেতু শিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক সেটা খুব ভালো কথা। উনি যদি লিখতে এবং পড়তে পারে তাহলে ওনার শেষ বয়সে কাজে লাগবে। ওনার এই ইচ্ছা থেকে অন্যান্যদেরও শিক্ষনীয় বিষয় হবে।